DNA রেপ্লিকেশন।ডিএনএ বংশগতির ধারক ও বাহক

DNA রেপ্লিকেশন

যে প্রক্রিয়ায় একটি ডিএনএ ডবল হেলি থেকে একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি ডিএনএ ডবল হেলিক্সের সৃষ্টি হয় তাকে ডিএনএ প্রতিলিপন (Replication) বলে।

রেপ্লিকেশনের সময়

কোষ বিভাজন আরম্ভ হওয়ার পূর্বে ইন্টারফেজ পর্যায়েই ডিএনএ প্রতিলিপন সম্পন্ন হয়। ওয়াটসন ও ক্রিক (১৯৫৬) ডিএনএ অণুর প্রতিলিপনের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে তিনটি অনুকল্প প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলাে হলাে-

(ক) সংরক্ষণশীল পদ্ধতি (Conservative)-

মূল ডিএনএ ডবল হেলিক্সের কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়েই নতুন ডিএনএ ডবল হেলিক্স এর সৃষ্টি হয়।

(খ) অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতি (Semiconservative)-

নব্য সংশ্লেষিত ডবল হেলিক্স এর প্রতিটিতে একটি পুরাতন ও একটি নতুন হেলিক্স থাকে।

(গ) বিচ্ছুরণশীল পদ্ধতি (Dispensive)-

এক্ষেত্রে নতুন সংশ্লেষিত ও পুরাতন সূত্রের খন্ড খন্ড অংশগুলাে এলােমেলােভাবে মিলিত হয়ে নতুন ডবল হেলিক্স তৈরি করে।

Matliew Meselon ও Franklin Stahl(১৯৫৭) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেন যে, ডিএনএ প্রতিলিপন হয় অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতিতে। ডিএনএ প্রতিলিপন কোষ বিভাজনের পূর্ব শর্ত। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০ধরনের প্রােটিন এবং বেশ কয়েক ধরনের এনজাইম জড়িত থাকে। এর মধ্যে ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম অত্যাবশ্যকীয়। নিম্নলিখিত ধাপগুলাের মাধ্যমে অতিদ্রুত, অবিচ্ছিন্ন ও নিখুঁতভাবে এ পদ্ধতিটি সম্পন্ন

DNA কীভাবে কাজ করে

DNA-এর প্রধান কাজ হলাে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা। জিন’ এর মাধ্যমে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় এবং বংশ পরম্পরায় স্থানান্তরিত হয়। জিন হলাে বংশগতির মৌলিক একক অর্থাৎ একটি জিন একটি নির্দিষ্ট বংশগতির বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করে।

আণবিক স্তরে একটি জিন হলাে DNA- এর একটি নির্দষ্ট খন্ড যা একটি কোষীয় উৎপন্ন দ্রব্য (সাধারণত পলিপেপটাইড) কোড করে। কোষ যে সব প্রােটিন ব্যবহার করে তা তৈরির সব তথ্য DNAতে থাকে।চোখের রঙ এর বৈশিষ্ট্য, চুলের বৈশিষ্ট্য এ সব দৃশ্যমান হয় ঐ বিশেষ প্রােটিন সংশ্লেষণের জন্যই।

১। জিন প্রকাশের প্রথম ধাপ হলাে DNA অণুর তথ্য (Encoded) ব্যবহার করে RNA অণু তৈরি।

২। সৃষ্ট RNA অণু DNA থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিউক্লিয়াস ত্যাগ করে বিশেষ প্রােটিন তৈরির সব তথ্য নিয়ে রাইবােসােমে আসে।

৩। রাইবােসােমে এসে ঐ নির্দিষ্ট RNA তার দেহে কোড করা তথ্য ব্যবহার করে নির্ধারিত সিকুয়েন্স অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় অ্যামাইনাে অ্যাসিড সংযুক্ত করে পলিপেপটাইড চেইন তৈরি করে।

৪। ২০ প্রকার অ্যামাইনাে অ্যাসিড বিভিন্নভাবে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন প্রােটিন তৈরি করে। DNA অণুর পর পর তিনটি বেস একটি ট্রিপলেট (Triplet) হিসেবে কাজ করে।

৫। ট্রিপলেট হলাে জেনেটিক ইনফরমেশনের মূল একক। প্রতিটি ট্রিপলেট একটি নির্দিষ্ট অ্যামাইনাে অ্যাসিড নির্দেশ করে। mRNA তে, DNA ট্রিপলেটের সম্পূরক পরপর তিনটি বেস সিকুয়েন্সকে বলা হয় কোডন (Codon)।

প্রতিটি কোডন একটি অ্যামাইনাে অ্যাসিড কোড করে। অর্থাৎ অ্যামাইনাে অ্যাসিডের জন্য সংকেত বহন করে।

ডিএনএ বংশগতির ধারক ও বাহক

ডিএনএ বংশগতি বিষয়ক বৈশিষ্ট্যাবলির ধারক ও বাহক। অধিকাংশ জীবের বংশগতির একক অর্থাৎ জিন ডিএনএ ছাড়া অন্য কিছু নয়। নিম্নলিখিত কারণে ডিএনএকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয়-

১। ডিএনএ দ্বারা কোষ বিভাজনের সময় এক নির্ভুল প্রতিলিপি সৃষ্টি হয় ।

২। ডিএনএ কোষের জন্য নির্দিষ্ট প্রকারের প্রােটিন সংশ্লেষণ করে।

৩। ডিএনএ বংশগতির সব ধরনের জৈবিক সংকেত বহন করার ক্ষমতা রাখে।

৪। ডিএনএ এর গঠন অত্যন্ত স্থায়ী এবং মিউটেশন ছাড়া এর কোন পরিবর্তন হয় না।

৫। জীব কোষের জৈবিক সংকেতের প্রেরক হচ্ছে ডিএনএ।

৬। কোন কারণে ডিএনএ অণুর গঠনে কোন পরিবর্তন হলে পরিবৃত্তির উদ্ভব হয়। আর পরিবৃত্তি হলাে বিবর্তনের মূল উপাদান।

DNA কে মাস্টার মলিকিউল বলে কেন?

জীব কোষের সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া ডিএনএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই ডিএনএ কে মাস্টার মলিকিউল বলা হয়। আবার ডিএনএ নিজে নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে এবং অন্যান্য কোষীয় উপাদান সৃষ্টি করে কিন্তু কোষের কোন অঙ্গাণু DNA সৃষ্টি করতে পারে না। তাই DNA কে মাস্টার মলিকিউল বলে।

Leave a Comment