হিমােফিলিয়া (Haemophilia or Bleeder’s Disease)

হিমােফিলিয়া (Haemophilia or Bleeder’s Disease)

হিমােফিলিয়া হলাে বংশগতভাবে সঞ্চারণশীল বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এক প্রকার রক্ত তঞ্চন(রক্ত জমাট বাধা) ঘটিত অস্বাভাবিকতা।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত তঞ্চন হয় না এবং ক্ষরণজনিত কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে। মানুষের সেক্স (X) ক্রোমােসােমে অবস্থিত হিমােফিলিয়া রােগের প্রচ্ছন্ন জিনটি স্বাভাবিক অ্যালিল ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চনের জন্য দায়ী। প্রাচীনকাল হতে অনেক পরিবারের পেডিগ্রি পরীক্ষা কেরে দেখা গেছে যে, এ প্রচ্ছন্ন জিনটি বংশ পরম্পরায় পিতা হতে কন্যার মাধ্যমে পৌত্রকে (grandson) আক্রান্ত করে।

হিমােফিলিয়ার জিনটি পিতার ক্রোমােসােমে থাকে বলে তা শুধুমাত্র তার কন্যারা পেতে পারে। পুত্র সন্তানগণ পিতা কোন X ক্রোমােসােম পায় না বলে তাদের পক্ষে পিতা হতে এই জিন লাভ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এ জিন বহনকারী মাতা হতে এই জিন সে লাভ করতে পারে। এ কারণেই হিমােফিলিয়া আক্রান্ত পিতা হতে শুধুমাত্র কন্যার মাধ্যমে তার পৌত্রগণ তা লাভ করতে সক্ষম এবং কোনক্রমেই পিতা হতে পুত্রগণ এ জিন প্রাপ্ত হয় না।

ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়ার কোন পূর্ব পুরুষে হিমােফিলিয়ার জিনটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনুমান করা হয় যে, মিউটেশন এর ফলেই তা সর্বপ্রথম মহারাণী ভিক্টোরিয়া (১৮১৯-১৯০১) লাভ করেন। ভিক্টোরিয়ার ৯ সন্তানদের মধ্যে পুত্র ২ কন্যা-অ্যালিস এবং বিয়াট্রিস বাহক ছিল। মহারাণী ভিক্টোরিয়া থেকে এ মৃত্যুদূতবাহী জিনটি বিয়ের মাধ্যমে ইউরােপের রাজ পরিবারগুলাের (Royal family) মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।

X ক্রোমােসােমে অবস্থিত স্বাভাবিক এবং হিমােফিলিয়াক অ্যালিল দুইটি যথাক্রমে XH ও Xh। মহিলারা তিন প্রকার জিনােটাইপবিশিষ্ট হতে পারে।

যথা- সম্পূর্ণ স্বাভাবিক-XHXHস্বাভাবিক কিন্তু বাহক- XHXh ও হিমােফিলিয়াক XhXh। পুরুষ দুই ধরণের জিনোটাইপ বিশিষ্ট হতে পারে। যথা- সম্পূর্ণ স্বাভাবিক XHY হিমোফিলিয়াক XhY।

জিনতাত্বিক ব্যাখ্যা

স্ত্রীলােকের মধ্যে হিমােফিলিয়া

স্ত্রীলােকেরা হিমােফিলিয়া রােগে আক্রান্ত হয়না বললেই চলে। কারণ, হিমোফিলিয়ার হােমােজাইগাস জিন ধারণকারী কন্যা সন্তান জন্মাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

এ ছাড়া একটি হােমােজাইগাস হিমােফিলিয়াক কন্যা সন্তান সাধারণত জীবনের প্রথম ঋতুস্রাবের সময় (menstruation) রক্তপাতের ফলে মৃত্যুবরণ করে। হিমােফিলিয়ার প্রকারভেদ এবং কারণ: প্রধানত দুই ধরনের হিমােফিলিয়া দেখা যায়। যথা- হিমােফিলিয়া A এবং B।

রক্ত তঞ্চনের (blood clotting) জন্য ফিব্রিনােজেন, প্রােথ্রোম্বিন, Ca ইত্যাদিসহ ফ্যাক্টর viii এবং ফ্যাক্টর ix এবং আরাে অনেক ফ্যাক্টর প্রয়ােজন। হিমােফিলিয়া আক্রান্তরা ফ্যাক্টর viii এবং ফ্যাক্টর ix তৈরি করতে পারে না। হিমােফিলিয়া A এর ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর iii এবং হিমােফিলিয়া B (একে খ্রিস্টমাস রােগও বলা হয়) এর ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর ix এর অভাব দেখা যায়। ফলে রক্ত তঞ্চন ঘটে না।

আর তাই হিমােফিলিয়াকদের দেহের কোন স্থান কেটে গেলে, এমনকি স্বাভাবিক কাজ কর্ম সম্পাদনকালেও অভ্যন্তরীণ রক্তপাত (bleeding) ঘটতে পারে। বিশেষ করে, হালকা ব্যায়ামকালে অস্থিসন্ধিতে রক্তপাত একটি সমস্যা। দুই ধরনের হিমােফিলিয়ার মধ্যে হিমােফিলিয়া A ই বেশি এবং আক্রান্তরা ইনজেকসন দ্বারা নিয়মিতভাবে ফ্যাক্টর viii গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ এবং সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারে।

রক্ত তঞ্চনের ফ্যাক্টর viii এবং ফ্যাক্টর ix সৃষ্টিকারী জিন X ক্রোমােসােমে অবস্থান করে। যেকোনাে একটি ফ্যাক্টরের জন্য দায়ী জিনের মিউটেসন ঘটলে ফ্যাক্টরগুলাে তৈরি হতে পারে না। তখনই হিমােফিলিয়া দেখা দেয়।

ডুশিনী মাসকুলার ডিসট্রোফি (Duchene Muscular Dystrophy, DMD)

ডুশিনী মাসকুলার ডিসট্রোফি শিশুদের একটি বিয়ােগান্তক ক্রমশঃ ক্ষয়ে যাওয়া রােগ (tragic wasting discase)। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেরা এতে আক্রান্ত হয়।

শৈশব থেকেই আক্রান্ত শিশুর শারীরিক কর্মকাণ্ডে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফাইব্রাস টিস্যু দ্বারা পেশি প্রতিস্থাপিত হওয়ার কারণে পা এবং ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং অগ্রগতিশীল দুর্বলতা প্রকাশিত হয় (progressive weakness develops)।

সাধারণত ১০ বছর বয়সেই একটি শিশুর সঙ্গী হয়ে যায় দুইটি চেয়ার এবং পেশি ক্ষয় বহাল থাকার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি ২০ বছরের অধিক কমই বাঁচে। DMD এর জিনটি সেক্স লিঙ্কড প্রচ্ছন্ন জিন (sex linked recessive gene) এবং X ক্রোমােসােমে পাওয়া যায়। এই জিনটিও আড়াআড়িভাবে অর্থাৎ পিতা থেকে কন্যা ও কন্যা থেকে নাতীর মধ্যে সঞ্চারিত হয়।

মনে করা হয়, DMD এর জন্য অ্যালিলটি একটি এনজাইম তৈরি করে যা ফাইব্রাস টিস্যু দ্বারা পেশির প্রতিস্থাপন ঘটায়। প্রতি ৪০০০ ছেলে শিশুর মধ্যে ১জন DMD দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জিনের স্বতস্ফূর্ত(spontaneous) মিউটেসনের ফলশ্রুতি। এই সকল ক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশুর মা জিনটির বাহকও নন।

DMD সম্পর্কে গবেষণা বাহক শনাক্তকরণসহ প্রিন্যাটাল ডায়াগনােসিসে সীমাবদ্ধ। জিন থেরাপী দ্বারাও এর সমাধান থাকতে পারে।

Leave a Comment