- হাইড্রার অন্তর্গঠন(Internal structure)
- এক্টোডার্ম (Ectoderm) বা এপিডার্মিস (Epidermis)
- (১) পেশী-আবরণী কোষ (Musculo-epithelial cells)
- (২) ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell)
- (৩) স্নায়ুকোষ (Nerve cell)
- (৪) সংবেদী কোষ (Sensory cell)
- (৫) গ্রন্থিকোষ (Gland cells)
- (৬) জনন কোষ (Germ cell)
- (৭) নিডােব্লাস্ট বা নিমাটোব্লাস্ট কোষ (Cnidoblast বা Nematoblast)
হাইড্রার অন্তর্গঠন(Internal structure)
হাইড্রার দেহপ্রাচীর বাইরের দিকে এক্টোডার্ম এবং ভিতরের দিকে এন্ডােডার্ম এই দুটো ভ্রূণীয় কোষস্তর নিয়ে গঠিত। এক্টোর্ডাম এবং এক্টোডার্মের মধ্যস্থলে মেসোগ্লিয়া (Mesoglea) নামে অকোষীয় স্তর বিদ্যমান।
সূতরাং হাইড্রার দেহ প্রাচীর -(A) এক্টোডার্ম নামক কোষীয়স্তর (B) মেসোগ্লিয়া নামক অকোষীয় স্তর এবং (C) এন্ডােডার্ম নামক কোষীয় স্তর নিয়ে গঠিত।
নিম্নে হাইড্রার দেহপ্রাচীরের এপিডার্মিস বা বহিঃত্বকের কোষস্তরগুলাের বর্ণনা করা হলো।
এক্টোডার্ম (Ectoderm) বা এপিডার্মিস (Epidermis)
এক্টোডার্মের কোষগুলি বিভিন্ন কাজ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রূপান্তরিত হয়ে সুনির্দিষ্ট ও পৃথক পৃথক কাজে নিয়ােজিত থাকে।
এক্টোডার্মের কোষগুলাে বিশেষ করে আত্মরক্ষা, রক্ষণ, শিকার এবং প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
গঠনের ও কাজের ভিত্তিতে এক্টোডার্মের কোষগুলাে সাত ধরনের হয়। যথা:
(১) পেশী-আবরণী কোষ (Musculo-epithelial cells)
গঠন
এগুলাে এক্টোডার্মের এক ধরনেরবৃহদাকার এবং T আকৃতির কোষ। এসব কোষের বাইরের প্রান্ত প্রশস্ত ও মুক্ত এবং ভিতরের প্রান্ত সরু ও মেসােগ্লিয়া সংলগ্ন।
বাইরের ও ভিতরের দিকে এ সকল কোষ পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে একটা আবরণ গঠন করে। এ কোষে মায়ােনিম তন্তু নামে এক ধরনের নমনীয় ও সঙ্কোচন-প্রসারণশীল তন্তু এবং সাপাের্টিং তন্তু থাকে।
এছাড়া এসব কোষের সাইটোপ্লাজমে এক ধরনের নিঃস্রাবী দানা থাকে। এদের নিঃসৃত রসে কিউটিকল তৈরী হয়। এছাড়া এদের সাইটোপ্লাজমে রাইবােসােম, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিদ্রব্য, নিউক্লিয়াস, লাইসােসােম ইত্যাদি অঙ্গাণুও থাকে।
কাজ
(ক) এসব কোষ দেহাবরণ গঠন করে ।
(খ) কিউটিকল গঠন করে ।
(গ) এরা সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের অংশ বিশেষকে বাঁকা করে শিকার ধরা, চলন ইত্যাদিতে অংশ নেয়।
(২) ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell)
পেশী আবরণী কোষের মধ্যে মধ্যে একধরনের গােলাকার, ক্ষুদ্রাকৃতি ও অপরিণত কোষ দলবদ্ধভাবে সঞ্চিত থাকে। এদের নিউক্লিয়াস বড় ও স্পষ্ট। এদেরকে সঞ্চিত (Reserve) কোষ বা ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ বলে।
কাজ
এসব কোষ প্রয়ােজন মত অন্যান্য কোষে রূপান্তরিত হতে পারে। এরা হাইড্রার বৃদ্ধি, প্রজনন ও মুকুলােদগমে অংশ নেয় এবং নিডােব্লাস্ট কোষ, গ্রন্থি কোষ ও স্নায়ুকোষ ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।
(৩) স্নায়ুকোষ (Nerve cell)
এসব কোষ ক্ষুদ্রাকার, বহুভূজাকৃতি এবং দুই বা ততােধিক স্নায়ুতন্তু বিশিষ্ট। এদের স্নায়ুতন্তুগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে স্নায়ুজালকের মতাে তৈরী হয়।
এসব কোষ এক্টোডার্ম থেকেস্থানান্তরিত হয়ে মেসােগ্লিয়ার গায়ে সংলগ্ন হয়ে অবস্থান করতে থাকে।
কাজ
সংবেদীকোষসমূহ কর্তৃক গৃহীত উদ্দীপনা অনুযায়ী প্রতিবেদন সৃষ্টি করে (উন্নত প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্রের মত কাজ করে)।
(৪) সংবেদী কোষ (Sensory cell)
এসব কোষ সরু ও লম্বাকৃতির বা মাকু আকৃতির এবংএপিডার্মিসের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে। মুখের চারদিকে, পদচাকতি এবং কর্ষিকায় এদের সংখ্যাসর্বাধিক।
এদের পাদদেশে সূত্রকের সাহায্যে স্নায়ুকোষের সাথে যুক্ত। সংবেদী কোষের বাইরের প্রান্তে সংবেদী রোম থাকে।
কাজ
(ক) এ সকল কোষ তাপ, আলােক, স্পর্শ, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদির প্রতি সংবেদনশীল।
(খ) সংবেদী লােমের সাহায্যে এরা পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে স্নায়ুকোষে পৌছায়।
(গ) এরা আত্মরক্ষা, বাসস্থান নির্বাচন, খাদ্যবাছাই ইত্যাদিতে অংশ নেয়।
(৫) গ্রন্থিকোষ (Gland cells)
হাইড্রার মুখছিদ্র এবং পদচাকতিতে আঠালাে রসনিঃস্রাবী লম্বাকৃতি, সরু এবং নিঃস্রাবী দানাবিশিষ্ট গ্রন্থিকোষ থাকে।
কাজ
(ক) এদের নিঃসৃত আঠালাে রস হাইড্রাকে কোন তলে সংলগ্ন রাখে।
(খ) পদচাকতির গ্রন্থিকোষ বুদবুদ তৈরী করে হাইড্রাকে ভাসতে সাহায্য করে।
(গ) মুখছিদ্রের চারপাশের গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত আঠালাে পদার্থ খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে।
(৬) জনন কোষ (Germ cell)
প্রজনন ঋতুতে হাইড্রার দেহকান্ডের এক্টোডার্মে অস্থায়ীভাবে গঠিত জননাঙ্গে (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) হ্যাপ্লয়েড জননকোষ (শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু ) পাওয়া যায়।
কাজ
জনন কোষ যৌন প্রজননে অংশ নেয়।
(৭) নিডােব্লাস্ট বা নিমাটোব্লাস্ট কোষ (Cnidoblast বা Nematoblast)
পেশী আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে নিডোব্লাস্ট কোষ নামে এক বিশেষ ধরনের কোষ থাকে। এসব কোষ শুধুমাত্র সিলেন্টেরাটা পর্বের প্রাণীদের এক্টোডার্মে পাওয়া যায়।
এরা গােলাকার, ডিম্বাকার, নাশপাতি আকৃতির বা ফ্লাক্সের মত আকৃতি বিশিষ্ট। এরা দেহ প্রাচীরে এককভাবে এবং কর্ষিকাতে গুচ্ছকারে অবস্থান করে। নিডােব্লাস্ট কোষের দুটো অংশ। যথাঃ
ক) নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট সাইটোপ্লাজম এবং (খ) নিমাটোসিস্ট থলি বিশিষ্ট আবরক।
নিমাটোসিস্টের আবার দুটো অংশ। যথাঃ
(১) বাল্ব(Bulb)
এটা নিমােটোসিস্টের থলিকাকার অংশ। এই থলি সাধারণতঃ হিপনোটক্সিন নামে বিষাক্ত রসে পূর্ণ থাকে।হিপনোটক্সিন ফেনােল ও আমিষ নিয়ে গঠিত।
(২) সূত্রক (Thread)
থলির সামনের অংশ সরু ও লম্বা হয়ে নলাকৃতির সূত্রকে পরিণত হয়। একটা প্যাঁচানাে অবথায় বাল্বের মধ্যে অবস্থান করে। বিশ্রামরত অবস্থায় নিমাটোসিস্ট থলিটি অপারকুলাম নামক ঢাকনা দ্বারা আবৃত থাকে।
ওপারকুলামের পাশে নিডােসিল নামে একটা স্পর্শ সংবেদী কাঁটার মত সুতা থাকে।
কাজ
নিডােসিল উদ্দীপনা গ্রহণ করে নিমাটোব্লাস্টের অভ্যন্তরে প্রেরণ করে।
নিডোব্লাস্ট কোষ শিকার ধরা, আত্মরক্ষা, চলন ইত্যাদিতে অংশ নেয়।