শ্রেণিবিন্যাসের নীতি ও ধাপ সমুহ

শ্রেণিবিন্যাসের নীতি (Principles of classification)

শ্রেণিবিন্যাসের প্রধান নীতিগুলাে

শ্রেণিবিন্যাস করতে হলে ট্যাক্সনকে ক্রমান্বয়ে ক্যাটাগরি বা ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ট্যাক্সনের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যাবলির উল্লেখ করতে হবে প্রতিটি ট্যাক্সনের বৈজ্ঞানিক নাম থাকতে হবে।

ICZN-এর নিয়মাবলি অনুসরণ করে সুষ্ঠুভাবে নামকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

শ্রেণিবিন্যস্ত নমুনা যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বিভিন্ন জাতের জন্য নির্দিষ্ট সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবং সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাসের স্তর বা ধাপসমূহ (Taxonomic Categories) শ্রেণিবদ্ধ করার সময় প্রাণীদের বিভিন্ন স্তরে বা ধাপে স্থাপন করা হয়।

এসব স্তর বা ধাপকে শ্রেণিবিন্যাসের স্তর বা ধাপ বলে।

যেসব প্রাণীকে শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধাপে বা স্তরে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেসব প্রাণীকে ট্যাক্সন বলে (বহুবচনে- taxa)।

ট্যাক্সন হলাে শ্রেণিবদ্ধগত একক (taxonomic unit)।

শ্রেণিবিন্যাসে ব্যবহৃত প্রতিটি ক্যাটাগরিভুক্ত জনগােষ্ঠীকে একেকটি ট্যাক্সন taxonsবলে ।

যেমন- Animalia, Chordata,Mammalia, Primates, Hominidae, Homo একেকটি ট্যাক্সন।

প্রাণীদের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য কিছুটা পরিবর্তনসহ লিনিয়াস কর্তৃক প্রবর্তিত বিভিন্ন ধাপগুলাে ব্যবহৃত হয়।

শ্রেণিবিন্যাসের প্রধান একক ৭টি। এদের ক্রমবিন্যাস নিম্নরূপ :

১. Kingdom (জগৎ) —K

২. Phylum (পর্ব) — P

৩. Class (শ্রেণি)  —- C

৪. Order (বর্গ)  —0

৫. Family (গােত্র) —- F

৬. Genus (গণ) —— G

৭. Species (প্রজাতি)  — Sp

ক্যারােলাস লিনিয়াস প্রবর্তিত এই সাত স্তরবিশিষ্ট অনুক্রমিক শ্রেণিবিভাগ স্তর কাঠামােকে লিনিয়ান হায়ারার্কি (Linnaean Hierarchy) বলে।

নামকরণের নীতিমালা অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাসের প্রধান একক বা স্তর সাতটি।

প্রয়ােজন হলে একক বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কোনাে প্রধান এককের উপর-নিচে নতুন এককের প্রয়ােজন হলে প্রধান এককের আগে অধি (super) এবং পরে উপ (sub) যােগ করতে হবে। যেমন—অধিশ্রেণি (superclass) ও উপশ্রেণি (subclass)।

প্রজাতি (species)

প্রাণী শ্রেণিবিন্যাস স্তরের সর্বনিম্ন ধাপ ও মৌলিক একক হলাে প্রজাতি। John Ray (১৬৮৬) সর্বপ্রথম প্রজাতি বা Species শব্দটি ব্যবহার করেন।

এখানে প্রজাতির দুটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলাে।

(১) প্রজাতি হলাে সর্বাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিলসম্পন্ন একদল প্রাকৃতিক জীবগােষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে যৌন প্রজননের মাধ্যমে উর্বর সন্তান উৎপন্ন করে।

(২) প্রজাতি হলাে প্রাকৃতিক পরিবেশে অন্তঃপ্রজননক্ষম জীবকুল, যারা অন্যান্য জীব থেকে জননঘটিত স্বাত বজায় রাখে।

উপপ্রজাতি (Sub-species)

বৈসাদৃশ্যযুক্ত যেসব জীবগােষ্ঠী বা পপুলেশন আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে জিনের আদান প্রদান ঘটাতে সক্ষম তাদের একই প্রজাতির উপপ্রজাতি বলা হয়।

পূর্বে উপপ্রজাতি ভ্যারাইটি নামে গণ্য হতাে। বহিরাকৃতির দিক দিকে উপপ্রজাতিগুলাে পৃথক হওয়ায় তাদের শনাক্ত করতে অসুবিধা হয় না।

সাধারণত উপপ্রজাতিভুক্ত জীবগােষ্ঠীগুলাে আলাদা আলাদা ভৌগােলিক অঞ্চলে বসবাস করে ও সেক্ষেত্রে সমস্ত ভৌগােলিক অঞ্চলগুলােকে একত্রে প্রজাতির বিস্তার পরিধির অন্তর্ভুক্ত।

প্রাণিদের নামকরণ (Nomenclature)

কোন বিশেষ জীব বা জীবকূলকে নির্দিষ্ট নামে সনাক্তকরণের পদ্ধতিকে বলা হয় নামকরণ। এ প্রথা অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। প্রতিটি জীবই কোনো বিশেষ অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষা অনুসারে বিশেষ বিশেষ নামে পরিচিত।

এরূপ আঞ্চলিক নামকরণ প্রথা বিশেষ জীবটির সনাক্তকরণের ব্যাপারে সমস্যার সৃষ্টি করে।

সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারােলাস লিনিয়াস সর্বপ্রথম নামকরণের একটি প্রথা প্রবর্তন করেন।

এটি দ্বিপদ নামকরণ প্রথা(Bijomtal Nomenclature System) নামে পরিচিত। এ প্রথা অনুসারে প্রতিটি জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকে যার প্রথমটি গণ (Genus) নাম এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি (Species) নাম।

গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজী বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং প্রজাতি নামের আদ্যাক্ষর ছােট অক্ষরে লিখতে হয়।

দ্বিপদ নামকরণ

দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ দিয়ে প্রাণীর নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ বলে। নামকরণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী

কোনাে জীবের নামকরণ প্রথা অত্যন্ত জটিল এবং তা কতকগুলো নিয়ম অনুসারে সমাধা করা হয়।

প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলাে প্রাণী নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Commission of Zoological Nomenclature) প্রণয়ন করে থাকে এবং এ নিয়মগুলো আন্তর্জাতিক প্রাণী নামকরণ সংহিতায় (International Code of Zoological Nomenclature) লিপিবদ্ধ করা হয়।

নামকরণ সংক্রান্ত নিয়মগুলাে ১৯০১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় যা ১৯৬১ সালে সংশােধিত হয় এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত হয়।

দ্বিপদ নামকরণ নিয়মাবলী

(১) প্রতিটি প্রাণীর একটি বৈজ্ঞানিক নাম থাকবে এবং তার দুটি অংশ থাকবে; একে দ্বিপদ নামকরণ বলা হবে।

(২) দ্বিপদ নামের প্রথম অংশটি ঐ জীবের গণ নাম ও দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নামের নির্দেশক।

(৩) প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামটি অবশ্যই ল্যাটিন বা ল্যাটিনকৃত (Latinized) হতে হবে। (৪) দ্বিপদ নামকরণ ছাপা অক্ষরে হলে সর্বদা ইটালিক (ডান দিকে বাঁকা করে) হরফে হবে (যেমন-Bufo melanostictus, কুনােব্যাঙ। (৫) দ্বিপদ নামকরণ হাতে লিখলে ইংরেজী অক্ষর ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিটি অংশের নিচে একটি গণ,

অপরটি প্রজাতির) আলাদা আলাদাভাবে দাগ টানতে হবে।

(৬) গণ-নামটি বিশেষ্য ও এর আদ্যাক্ষরটি অবশ্যই বড় হরফে (Capital letter) লিখতে হবে এবং প্রজাতি-

নামটি বিশেষণ যার আদ্যাক্ষরটি ছােট হরফে (Small Letter) লিখতে হবে।

(৭) আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক পত্র পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নামই স্বীকৃতি পাবে।

(৮) যে বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোনাে জীবের বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা দিবেন, তার নাম উক্ত জীবের দ্বিপদ নামের শেষে

সংযােজিত হবে।

Leave a Comment