মায়ােসিস কোষ বিভাজনের ধাপঃমায়ােসিস-২

মাইটোসিসের ন্যায় মায়ােসিসও একটি অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোষ, নিউক্লিয়াস এবং ক্রোমােসােম এর বিভক্তির উপর ভিত্তি করে মায়ােসিস কোষ বিভাজনকে দুটি পর্বে ভাগ করা হয়। যথা-

(ক) মায়ােসিস-১ এবং

(খ) মায়ােসিস-২।

নিম্নে মায়োসিস-২ পর্যায়ের বর্ননা দেওয়া হলো।

মায়ােসিস-২

মায়ােসিস-১ দ্বারা সৃষ্ট প্রতিটি নিউক্লিয়াস মায়ােসিস-২ দ্বারা বিভক্ত হয়। মায়ােসিস-২ কে আবার চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা-

১।প্রােফেজ-২, ২। মেটাফেজ-২, ৩।অ্যানাফেজ-২ এবং ৪।টেলােফেজ-২।

এ বিভাজনটি ঘটে মূলত মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার অনুরূপ। মাইটোসিসের সময় ডিএনএ অণুর যে প্রতিরূপ সৃষ্টি হয় তা এখানে দরকার হয় না। কারণ প্রক্রিয়াটি প্রােফেজ-১ ধাপের আগেই সম্পন্ন হয়। মায়ােসিস-২ সংঘটিত হয় হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াসে। এরূপ প্রতিটি নিউক্লিয়াস থেকে পরিণামে দুটি করে হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয়। কাজেই সম্পূর্ণ মায়ােসিসে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস তথা চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) কোষ উৎপন্ন হয়।

১। প্রােফেজ-২

এ পর্যায়ে নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং পানি বিয়ােজনের ফলে ক্রোমােসােমগুলাে পুনরায় সংকুচিত হয়। ফলে ক্রোমােসােমগুলাে মােটা ও খাটো হয়। ক্রোমােসােমগুলাে ক্রোমাটিডে বিভক্ত অবস্থায় থাকে। এ পর্যায়ের শেষে নিউক্লিয়ােলাস ও নিউক্লিয়াপর্দা অদৃশ্য হয়।

২। মেটাফেজ-২

এ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যল্ড থাকে এবং আরও মােটা ও খাটো হয়। শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয়, ফলে প্রতিটি ক্রোমাটিড তার নিজস্ব সেন্ট্রোমিয়ার লাভ করে।

৩। অ্যানাফেজ-২

ক্রোমাটিড থেকে উৎপন্ন অপত্য-ক্রোমােসােমগুলাে আকর্ষণ তন্তুর (ক্রোমােসােমাল তন্তুর) সংকোচনের ফলে দু’মেরুতে সমভাবে বন্টিত হয়। আকর্ষণ তন্তুর সংকোচন ও ক্রোমাটিডগুলাের পারস্পরিক বিকর্ষণের ফলে ক্রোমােসােমগুলাে মেরুর দিকে অগ্রসর হয় এবং শেষে মেরুতে পৌছায়।

৪। টেলােফেজ-২

এ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলােতে পানিযােজন ঘটে, ফলে ক্রোমােসােমগুলাে সর ও লম্বা হতে থাকে এবং রঞ্জক ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে আর দেখা যায় না। উভয় মেরুতে ক্রোমােসােমের চারপাশে নিউক্লিয়ার এনভেলাপ সৃষ্টি হয় ও ভেতরে নিউক্লিয়ােলাস আবির্ভূত হয়।

সাইটোকাইনেসিস

সাইটোকাইনেসিসের মাধ্যমে সাইটোপাজম বিভক্তি ও কোষ প্রাচীর গঠিত হয় অর্থাৎ দু’মেরুর প্রত্যেকটি নিউক্লিয়াস তার চারপাশে সাইটোপ্লাজম ও কোষ প্রাচীর সহযােগে এক একটি স্বতন্ত্র কোষে পরিণত হয়। এভাবে মায়ােসিসের মাধ্যমে একটি ডিপ্লয়েড (2n) কোষ হতে হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমােসােম সংখ্যাবিশিষ্ট চারটি কোষের সৃষ্টি হয়।

মায়ােসিস কোষ বিভাজনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

১। ডিপ্লয়েড জীবে মায়ােসিস সাধারণত জনন মাতৃকোষে ঘটে।

২। মায়ােসিস কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াস দু’বার কিন্তু ক্রোমােসােম মাত্র একবার বিভক্ত হয়।

৩। প্রােফেজ-১ দীর্ঘস্থায়ী। তাই একে পাঁচটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।

৪। হােমােলােগাস ক্রোমােসােম জোড়া বেঁধে বাইভেলেন্ট সৃষ্টি করে।

৫। কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিংওভার ঘটে ফলে হােমােলােগাস ক্রোমােসােমের মধ্যে জিন বিনিময় ঘটে।

৬। একটি মাতৃকোষ হতে চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।

৭। ক্রোমােসােমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে।

৮। ক্রসিংওভার ও ক্রোমােসােমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে ফলে এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কোষগুলাে কখনই মাতৃকোষের সমগুণসম্পন্ন হয় না।

৯। মায়ােসিস শেষে সৃষ্ট নতুন কোষে নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে। বংশগতিতে প্রকরণ সৃষ্টিতে এটি খুবই গুরত্বপূর্ণ।

জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মায়ােসিসের অবদান

উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে মায়ােসিসের ফলে একটি জনন মাতৃকোষ হতে চারটি জনন কোষের সৃষ্টি হয়, ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমােসােম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমােসােম সংখ্যার অর্ধেক হয়।

দুটি জননকোষ,তথা পুংজননকোষ ও স্ত্রী জননকোষ একত্রে মিলিত হয়ে একটি জাইগােট সৃষ্টি করে। পরে জাইগােটটি মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে একটি ভ্রণ সৃষ্টি করে, ভ্রূণটি বারবার বিভাজনের মাধ্যমে একটি বহুকোষী জীবের সৃষ্টি করে।

কাজেই মায়ােসিস বিভাজনের মাধ্যমে উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের জননকোষগুলােতে ক্রোমােসােম সংখ্যা কমে জনন মাতৃকোষের অর্ধেক না হলে, জননকোষ দুটির মিলনে সৃষ্ট জীবে ক্রোমােসােম সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে (যেমন- হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ, শৈবাল) দুটি গ্যামিটের মিলনে সৃষ্ট জাইগােটে ক্রোমােসােম সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

যেহেতু ক্রোমােসােমই জীবের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী জিন (gene) বহন করে, সেহেতু সংখ্যা দ্বিগুণ পরবর্তী বংশধর তথা সন্তান সন্তুতির বৈশিষ্ট্য পিতা-মাতা থেকে ভিন্নতর হবে, যা জীবের টিকে থাকার হুমকির সম্মুখীন করতে পারে।

ডিপ্লয়েড জীবে গ্যামিট সৃষ্টিকালে জনন মাতৃকোষে এবং হ্যাপ্লয়েড জীবের জাইগােটে মায়ােসিস হয় বলেই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে।জীবদেহে মায়ােসিস কোষ বিভাজনের গুরত্ব :জীব জগতে মায়ােসিসের গুরত্ব অপরিসীম।

কারণ অধিকাংশ জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে মায়োসিস কোষ বিভাজন। মায়ােসিসের মাধ্যমে গ্যামিট সৃষ্টি হয়। পুং ও স্ত্রী গ্যামিটের মিলনের ফলে সৃষ্ট ভ্রূণের মাধ্যমে নতুন জীবের সৃষ্টি হয়।

কিন্তু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে স্পাের সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়।

জীবদেহে মায়ােসিসের গুরত্ব উলেখ করা হলাে-

১। গ্যামিট বা জনন কোষ সৃষ্টি

মায়ােসিসের কারণে জনন কোষ উৎপন্ন হয় যা যৌন জননে সক্ষম জীবের বংশবৃদ্ধিতে অপরিহার্য।

২। ক্রোমােসােম সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ

মায়ােসিসের মাধ্যমে সৃষ্ট গ্যামিটে ক্রোমােসােম সংখ্যা অর্ধেক থাকে যা যৌন জননের সময় মিলিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের ক্রোমােসােম সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখে।

৩। প্রজাতির নিজস্বতা বজায় রাখা

ক্রোমােসােম সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে পূর্ববর্তী প্রজন্মের নিজস্বতা বজায় রাখে।

৪। বৈচিত্র্যের সৃষ্টি

মায়ােসিসে ক্রসিংওভারের ফলে জিনের যে আদান প্রদান ঘটে তা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত জীবসমূহে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।

৫। অভিব্যক্তি (Evolution)

মায়ােসিসের ফলে সৃষ্ট বৈচিত্র্য অভিব্যক্তির ধারা ও প্রবাহের সৃষ্টি করে।

৬। জনুক্রম

যে সকল জীবের জীবনচক্রে জনুক্রম আছে সেখানে মায়ােসিস প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। সত্যিকার অর্থে মায়ােসিস কোষ বিভাজন ছাড়া যৌন জননক্ষম জীবের অভিযোজন এবং টিকে থাকা কল্পনা করা যায় না।

Leave a Comment