বিবর্তনের সমালােচনাসমূহ

বিবর্তনের সমালােচনাসমূহ

একে দুটি ভাগে বর্ণনা করা যায়। যথা-

১। ল্যামার্কিজম মতবাদের সমালােচনা ও

২। ডারউইনিজম মতবাদের সমালােচনা।

ল্যামার্কিজম মতবাদের সমালােচনা

ল্যামার্কের সমকালীন অনেকের সাময়িক স্বীকৃতি পেলেও এ মতবাদ বিজ্ঞানী মহলে অনেক কারণে সমর্থনযােগ্য হয়নি। যেমন- ল্যামার্কের ব্যবহার ও অব্যবহার তত্ত্বটি সত্য নয়। কারণ- শিরা ও ধমনি ক্রমাগত ব্যবহৃত হলেও এদের আকার ও আয়তন কখনােই বৃদ্ধি পায় না, আবার ব্যবহারের ফলে কোনাে অঙ্গের বৃদ্ধি হয়তাে হতে পারে। কিন্তু ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে কোনাে অঙ্গের নিষ্ক্রিয়তা কিংবা অবলুপ্তির ঘটনাও বিরল নয়, অর্জিত গুণের বংশানুক্রম সমর্থনযােগ্য নয়। লেজ কাটা কুকুরের বাচ্চা জন্মসূত্রে কখনােই লেজবিহীন হয় না। অভাব বােধ ও দরকারের তাগিদে অঙ্গ সৃষ্টির ধারণা সমর্থযােগ্য নয়। আকাশে উড়বার আকাঙ্ক্ষায় কোনাে মানুষের মনে পাখির ন্যায় ডানার জন্য অভাব বােধ মানুষের দেহে কখনাে ডানা গজাবে না। ইন্দ্রিয় সৃষ্টির পূর্বে কোনাে ইন্দ্রিয়ের জন্য অভাব অনুভূত হওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। ল্যামার্ক ধারণা করতেন ক্রিয়ার ফলেই কোনাে অঙ্গের সৃষ্টি হয় কিন্তু অঙ্গ না থাকলে তার ক্রিয়ার প্রশ্ন অবান্তর।

ডারউইনিজম মতবাদের সমালােচনা

বিবর্তনের ক্ষেত্রে ডারউইনের মতবাদ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী সাড়া জাগানাে অবদান। বিশ্বব্যাপী সমর্থিত হলেও মতবাদটি সর্বজন স্বীকৃত নয়। কারণ- এ মতবাদে যেমন কতকগুলাে যৌক্তিক ও প্রশংসনীয় দিক রয়েছে তেমন কতকগুলাে অযৌক্তিক দিকও রয়েছে। নিম্নে যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দিকগুলাে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলাে-

ডারউইন মতবাদের যৌক্তিক দিকঃ

ডারউইন মতবাদের মূল বক্তব্যগুলাে অনেকাংশেই বাস্তব ও যৌক্তিক। বিবর্তনের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত যে সকল প্রমাণ পাওয়া গেছে তা ডারউইনবাদের সমার্থক।

অতীতের অনেক বৃহদাকার জীব জীবন সংগ্রামে ব্যক্ত হয়ে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অভিযােজনে ব্যর্থ অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ডারউইনবাদের পক্ষে কথা বলে।

• প্রকৃতিতে একই প্রজাতির দুটি জীব হুবহু এক রকম নয়। এটি প্রকৃতিতে প্রকরণের উপস্থিতি প্রমাণ দেয়।

ডারউইন মতবাদের অযৌক্তিক দিক

জীবন সংগ্রামে যােগ্যতমের জয়ের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কিভাবে উপযুক্ত প্রকরণের উদ্ভব হয় তা বলা হয়নি। জীবজগতের সকল নির্বাচন প্রাকৃতিক নির্বাচন নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন কোনাে জীবদেহে নিস্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতি ব্যাখ্যা করতে অপারগ। ডারউইন যেকোনাে ধরনের প্রকরণ বা পরিবৃত্তিকে বংশগত মনে করতেন। কিন্তু আমরা জানি কেবল জনন কোষের সংগঠিত প্রকরণগুলােই বংশানুসরণযােগ্য। একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে যে সামান্য পার্থক্য দেখা যায় তার ভিত্তিতে নতুন প্রজাতি সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম।

Leave a Comment