বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty)। রজঃচক্র

বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty/Adolescense)

মানবজীবনের যে পর্যায়ে পুরুষ ও স্ত্রী দেহে বাহ্যিক গৌন যৌন বৈশিষ্ট্যসমূহ বিকশিত হতে থাকে এবং প্রজনন অঙ্গগুলাে সক্রিয় হতে শুরু করে তাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এ সময়টি হচ্ছে কৈশাের অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পণের মুহূর্ত।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালের বয়স ১৩-১৪ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১-১৪ বছর বলে বিবেচনা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন হরমােনের প্রভাবে দৈহিক গঠন ও চরিত্রে নানা পরিবর্তন বা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের এসব বৈশিষ্ট্যকেই গৌন যৌন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- মেয়েদের স্তন,ছেলেদের দাঁড়ি-গোঁফ ইত্যাদি।

বয়স সন্ধিকালে পুরুষের গৌন যৌন বৈশিষ্ট্য

মুখ, বগল ও শ্রোণিদেশে লােম গজানাে শুরু হয়। লিঙ্গ ও শুক্রাশয় আকারে বৃদ্ধি পায় স্বরযন্ত্রের বৃদ্ধি ও কণ্ঠস্বর গাঢ় বা গম্ভীর হয়। শুক্রাণু উৎপাদন ও বীর্যপাত শুরু হয়।

বয়স সন্ধিকালে মেয়েদের গৌন যৌন বৈশিষ্ট্য

বগল ও শ্রোণিদেশে লােম গজানাে শুরু হয়। স্তন ও জরায়ু বৃদ্ধি পায়। নিতম্ব (Hips) প্রশস্ত হয়। রজঃচক্র/মাসিক ও ডিম্বস্ফুটন শুরু হয়।

রজঃচক্র

বয়োপ্রাপ্ত নারীর সমগ্র যৌন জীবনে প্রায় নিয়মিত, গড়ে ২৮ দিন (২৪–৩২ দিন) পরপর জরায়ু থেকে রক্ত, মিউকাস, এন্ডোমেট্রিয়ামের ভগ্নাংশ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অনিষিক্ত ডিম্বাণুর চক্রীয় নিষ্কাশনকে রজঃচক্র বলে। গোনাডোট্রফিক হরমোন (GTH) এর প্রভাবে ১২–১৫ বয়সে এ চক্রের সূত্রপাত ঘটে এবং ৪৫–৫০ বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

রজঃচক্র কয়েকটি ধাপে সংঘটিত হয় যেমন-

রজঃস্রাবীয় পর্যায় (১-৫ দিন)

রজঃস্রাব এ পর্যায়ের প্রারম্ভ নির্দেশ করে। ডিম্বপাতের পর ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে (৩৬ঘণ্টার মধ্যে) কর্পাস লুটিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন-এর ক্ষরণমাত্রা কমে যাওয়ায় এন্ডােমেট্রিয়াম আর বৃদ্ধি পায় না এবং ভাঙ্গতে শুরু করে।

রক্তের অভাবে এন্ডােমেট্রিয়ামের কুণ্ডলীকৃত ধমনিগুলাে প্রসারিত হয়ে ছিন্ন ভিন্ন হলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন এর ক্ষরণমাত্রা অনেক নিচে নেমে গেলে সম্মুখ পিটুইটারি গ্রন্থির উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় তখন Follicle stimulating Hormone ও Leutinizing Hormone ক্ষরণ শুরু হয়।

ফলে এন্ডােমেট্রিয়াম ভেঙ্গে গিয়ে অনিষিক্ত ডিম্বাণুসহ মিউকাস ও রক্ত যােনি পথে নির্গত হয়। শুরু হয় রজঃচক্র পর্যায়।

ফলিকল পর্যায় (৬-১৩ দিন)

রজঃচক্রের ৬-১৩তম দিনে বর্ধনশীল ফলিকলের ফলিকল কোষ থেকে অধিক মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ক্ষরিত হয়। জরায়ুর এন্ডােমেট্রিয়াম পুরু হতে শুরু করে, গ্রন্থিসমূহ কুণ্ডলীত হতে থাকে ও রক্ত জালিকাগুলাে বৃদ্ধি পায়।

ওভুলেশন পর্যায় (১৪ দিন)

লুটিনাইজিং হরমােনের প্রভাবে চতুর্দশ দিনে গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণু মুক্ত হয়ে ডিম্বনালির মাধ্যমে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয়। গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণুর নিঃসরণ বা নিষ্ক্রমণকে ডিম্বস্ফুটন (Ovulation) বলে।

কর্পাস লুটিয়াম পর্যায় (১৫-২৮ দিন)

ডিম্বাণু ক্ষরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলিকলের অবশিষ্ট থিকা কোষগুলােতে দ্রুত ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে যাকে লুটিনাইজেশন বলে।

ফলে গ্রাফিয়ান ফলিকল কর্পাস লুটিয়াম (corpus luteum)এ পরিণত হয়। হলুদ বর্ণ ধারণ করে বলে কর্পাস লুটিয়ামকে ইয়েলাে বডি (yellow body)ও বলা হয়। কর্পাস লুটিয়াম ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন তৈরি করে। ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রােজেস্টেরন জরায়ু প্রাচীরকে উপযােগী করে এবং একই সাথে ফলিকল উদ্দীপক হরমােন উৎপাদনে বাঁধা দেয়। ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে ভ্রূণ জরায়ু প্রাচীরে প্রথিত হয়।

পরবর্তীতে সৃষ্ট প্লাসেন্টা ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন তৈরির মাধ্যমে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের পরিবেশ বজায় রাখে। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে ১০-১২ দিন পর কর্পাস লুটিয়াম নষ্ট হয়ে যায় ফলে ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন উৎপাদন বন্ধ হয়। ফলশ্রুতিতে রক্ত জালক ফেটে গিয়ে পরবর্তী চক্রের রজঃস্রাব পর্যায় শুরু হয়।

রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা

গোনাডোট্রফিন হরমোন মস্তিষ্ক উৎপাদিত হয় । এটি ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (FSH), ল্যুটিনাইজিং হরমোনের(LH) উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে ।

FSH বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন মস্তিষ্কে উৎপাদিত হয় এবং ডিম্বাশয়গুলিতে  ডিম্বাণু পরিপক্ক হওয়ার জন্য দায়ী ।

পিটুইটারি গ্রন্থিতে উৎপাদিত ল্যুটেনাইজিং হরমোন ডিম্বাণুকে মুক্ত করার জন্য ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করে ।

 ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন তৈরি করে যা ডিম্বাণু সৃষ্টির জন্য কাজ করে।

প্রোজেস্টেরোন হরমোন ডিম্বাশয় দ্বারা উৎপাদিত হয়,রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পাশাপাশি গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতির জন্য কাজ করে।

বয়সন্ধি নিয়ে আর লিখতে হবে।

Leave a Comment