প্রাণিজগতের প্রধান ১০টি পর্ব ও এদের শ্রেণী (Class) পর্যন্ত বৈশিষ্ট্য এবং উদাহরণ

প্রাণিজগতের প্রধান ১০টি পর্ব ও এদের শ্রেণী (Class) পর্যন্ত বৈশিষ্ট্য এবং উদাহরণ উল্লেখ করা হলোঃ-

পর্ব ১: Porifera (পরিফেরা)

 (porus = ছিদ্র + ferre = বহন করা। ১৮৩৬ সালে Grant সর্বপ্রথম পর্বটির নামকরণ করেন।)

বৈশিষ্ট্য

১। দেহপ্রাচীর অস্টিয়া (Ostia) নামক অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত ।

২। এরা বহুকোষী হলেও কোষগুলাে সুবিন্যস্ত নয়, তাই সুনির্দিষ্ট কলাতন্ত্রও নেই।

৩। দেহে বিশেষ নালিকাতন্ত্র (Canal system) আছে।

৪। দেহে কোয়ানোসাইট (Coanocyte) নামে এক বিশেষ ফ্লাজেলাযুক্ত কোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত এক বা একাধিক প্রকোষ্ঠ (Chamber) রয়েছে।

৫। দেহের ভেতরে স্পঞ্জোসিল (Spongocoel) নামে একটি প্রসস্ত গহ্বর আছে যা দেহের বাইরে অসকুলাম (Osculum) নামে একটি বড় প্রান্তিক ছিদ্রপথে উন্মুক্ত।

উদাহরণঃ Sycon gelatinosum(স্পঞ্জ)

Leucosolenia complicata

Euplectella aspergillus

Hyalonema

Spongilla locustris

Poterion neptuni

পর্ব ২: Cnidaria (নিডেরিয়া)

(গ্রীক, Knide = রােমকাটা + aria = সংযুক্ত। ১৮৮৮ সালে Hatschek পর্বটির নামকরণ করেন)

বৈশিষ্ট

১। ভ্রূণ অবস্থায় দুটি কোষস্তর থাকে, বাইরে এক্টোডার্ম (বহিঃত্বক) এবং ভেতরে এন্ডােডার্ম (অন্তঃত্বক); তাই এদের ডিপ্লোব্লাস্টিক বা দ্বিস্তরবিশিষ্ট বা দ্বিত্বকযুক্ত প্রাণী বলে।

২। এরা নিম্নশ্রেণির বহুকোষী অরীয় প্রতিসম প্রাণী । এরা বহুকোষী হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্র সুগঠিত নয়।

৩। দেহের ভেতরে সিলেন্টেরন নামে একটি প্রশস্ত গহ্বর থাকে যা একমাত্র মুখছিদ্র পথে বাইরে মুক্ত; কোনাে পায়ুপথ নেই। সিলেন্টেরনে খাদ্য পরিপাক ও পরিবহন ঘটে তাই একে গ্যাস্ট্রোভাসকুলার গহ্বর বলে।

৪। দেহত্বকে বিপুল সংখ্যক নিডােব্লাস্ট (Cnidoblast) নামক দংশক কোষ থাকে। নিডোব্লাস্ট কোষে হিপনোটক্সিন নামক বিষ থাকে।

৫। এদের খাদ্যবস্তু বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয় উভয়ভাবেই পরিপাক হয়।

উদাহরণঃ

Hydra virdis (হাইড্রা)

Obelia geniculata (প্রবাল)

Nanomia bijuga

Corymorpha palmala

Aurelia aurita (জেলিফিশ)

Cyania capillata

Chironex fleckeri

Stephanoscyphus racemosus

Metridium senil

Gorgonia verrucosa

Pennatula aculeata (সমুদ্র পালক)

Corallitum nobile (লাল প্রবাল)

পর্ব ৩: Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস)

(গ্রীক, platy = চ্যাপ্টা + helminthes = কৃমি। ১৮৫৯ সালে Gogenbour এ পর্বের নামকরণ করেন)

বৈশিষ্ট্য

১। দেহ পাতা বা ফিতার মতাে উপরে-নীচে চাপা ও দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।

২। দেহ গহ্বর বা সিলােম নেই; এরা অ্যাসিলোমেট প্রাণী হিসেবে পরিচিত।  বিভিন্ন অঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে মেসেনকাইম নামক কলা থাকে।

৩। শিখা কোষ বা ফ্লেম সেল (Flame cell) এর মাধ্যমে রেচন কাজ পরিচালনা করে।

৪। দেহের পেশীগুলাে স্তরে স্তরে ও গুচ্ছাকারে বিন্যস্ত থাকে।

৫। চোষক বা হুক দিয়ে পােষকদেহের সঙ্গে লেগে থাকে।

উদাহরণঃ Dugesia tigrina (প্ল্যানেরিয়া)

Bipalium kewensi

Microstomumn lineare

Fasciola hepatica (যকৃত কৃমি)

Schistosoma mansoni

Aspidogaster conchicola

Paragonimus westermani

Opisthorchis sinensis

Rigantocotyle explanatum

Echinococcus granulosus

Hymenolepis nana

Taenia solium(ফিতাকৃমি)

Dipylidium caninum

Diphyllobothrium latus

পর্ব ৪ : Nematoda (নেমাটোডা)

(গ্রীক, nema = সূতা + eides = আকার)

বৈশিষ্ট্যঃ

১। দেহ নলাকার, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও দু’দিক সুঁচালাে ।

২। পৌষ্টিক নালী সােজা ও শাখাহীন এবং মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত।

৩। মুখচ্ছিদ্র সাধারণত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ওষ্ঠ দিয়ে পরিবেষ্টিত।

৪। দেহ ইলাস্টিন-নির্মিত পুরু কিউটিকলে আবৃত। পোষকের পরিপাকনালীর পাচক রস হতে রক্ষা করে কিউটিকল।

৫। অপ্রকৃত সিলােম উপস্থিত। এরা সিউডোসিলোমেট নামে পরিচিত।

৬। স্নায়ুতন্ত্র একটি বৃত্তাকার নার্ভ রিং এবং কয়েকটি স্নায়ু ও লম্বালম্বি স্নায়ুরজ্জু নিয়ে গঠিত।

উদাহরণঃ

Trichinella spiralis(চাবুক কৃমি)

Trichuris trichiura

Ascaris lumbricoides (গোল কৃমি)

Enterobius vermicularis(গুড়াকৃমি)

Wuchereria bancrofti(ফাইলেরিয়া কৃমি)

Ancylostoma duodenale(হুক কৃমি)

Loa loa (চোখকৃমি)

পর্ব ৫ : Annelida (অ্যানিলিডা)

(ল্যাটিন, annulus =আংটি। ১৮০৯ সালে Lamarck পর্বটির নামকরণ করেন।)

বৈশিষ্ট্য:

১। দেহ লম্বাটে ও নলাকার।

২। প্রকৃত খন্ডায়ন উপস্থিত (অথাৎ দেহ অনেকগুলাে আংটির মতাে খন্ডকে বিভক্ত যা দেহের ভেতরে ও বাইরে

সুচিহ্নিত)। প্রতিটি খন্ডকে বলে সোমাইট বা খণ্ডক।

৩। প্রকৃত সিলােম উপস্থিত (অর্থাৎ দেহগহ্বর পেরিটোনিয়ামে পরিবেষ্টিত)।

৪। চলন অঙ্গ কাইটিনজাত সিটি (setae) বা জোড় পার্শ্বীয় প্যারাপােডিয়া (Parapodia)।

৫। নেফ্রিডিয়া (Nephridia) প্রধান রেচন অঙ্গ যা প্রায় প্রতিটি খন্ডকেই অবস্থিত।

৬। সমস্ত শরীর এক্টোডার্ম নিঃসৃত স্বচ্ছ ও স্যাতস্যাতে কাইটিনবিহীন কিউটিকলে আবৃত।

উদাহরণঃ

Neanthes virens (নেরিস)

Aphrodite aculeata

Glycera convoluta

Palola viridis

Vanadis formosa

Pheretima posthuma (কেঁচো

Lumbricus terrestris

Allolobophora rosea

Aulophorus carteri

Hirudinaria viridis (জোঁক)

Haemopis terrestris

Erpobdella punctata

Placobdella costata

Piscicola geometra

পর্ব ৬ : Arthropda (আর্থোপােডা)

(গ্রীক, arthro – সন্ধি + poddos = পা। ১৮৪৫ সালে siebold এ পর্বের নামকরণ করেন।)

১। দেহ কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল দিয়ে আবৃত, নির্দিষ্ট সময় পর পর এ কঙ্কাল পরিত্যক্ত হয় ।

২। দেহ খণ্ডায়িত,টাগমাটাইজেসন দেখা যায়। দেহখন্ডক পার্শ্বীয় সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ (Jointed appendages) বিশিষ্ট।

৩। দেহের ভেতরে গহবরটি রক্ত পূর্ণ যা হিমােসিল (Haemocoel) নামে পরিচিত।

৪। মাথার দু’পাশে দুটি পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) দেখা যায় ।

৫। মালপিজিয়ান নালিকা প্রধান রেচন অঙ্গ। এছাড়া সবুজগ্রন্থি,কক্সাল গ্রন্থি, খোলস,ফুলকা রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

৬। প্রধান শ্বসন অঙ্গ মালপিজিয়ান নালিকা ও ফুলকা। কিছু সদস্য পুস্তক ফুসফুস দিয়েও শ্বসন সম্পন্ন করতে পারে।

Arthropoda পর্বে এত বৈচিত্র্যময় প্রাণিগােষ্ঠীর সমাবেশ ঘটেছে যে, এ পর্বের সর্বসম্মত শ্রেণীবিন্যাস এখনওপর্যন্ত মতানৈক্য সৃষ্টি করে আসছে।

উদাহরণঃ

Palaemon carcinus (চিংড়ি)

Carcinus maenas (কাঁকড়া)

Julus terrestris (কেন্নো পোকা)

Scolopendra gigantea(বাগান শতপদী)

Periplaneta americana (তেলাপােকা)

Pediculus humanus (উকুন)

Apis indica (মৌমাছি)

Musca domestica (মাছি)

Lycosa lenta (মাকড়শা)

Androctonus australis (কাঁকড়া বিছা)

Tydeus starri (মাইট)

পর্ব ৭ : Mollusca (মােলাকা)

(ল্যাটিন, molluscus নরম; Aristotle এ পর্বের নামকরণ করেন)

বৈশিষ্ট্যঃ

১। দেহ খণ্ডায়নবিহীন, কোমল ও মাংসল।

২। ম্যান্টল (Mantle) নামক পেশীময় আবরণে দেহ আবৃত। এ আবরণ থেকে নিঃসৃত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ক্ষরণের মাধ্যমে খােলক (Shell) তৈরি করে।

৩। দেহের অঙ্কীয়দেশে মাংসল পা থাকে (পা সাঁতার কাটতে ও গর্ত খননে ব্যবহৃত হয়)।

৪। দেহে সুস্পষ্ট মস্তক, কর্ষিকা ও সংবেদী অঙ্গ রয়েছে।

৫। পৌষ্টিক নালী সােজা অথবা “U” আকৃতির; অধিকাংশ প্রাণীর মুখ গহ্বর র্যডুলা (Radula) নামক একটি কাঁটাযুক্ত অংশ সমন্বিত।

উদাহরণঃ

Neopilina galatheae(নিওপিলিনা)

Cryptochiton stelleri

Mopalia muscosa

Chaetopleura apiculata

Lepidochitona cinerea

Pila globosa(আপেল শামুক)

Lamellidens marginalis(ঝিনুক)

পর্ব ৮:Echinodermata(একাইনােডার্মাটা)

(গ্রীক , echinos = কাটা + derma = ত্বক। ১৭৩৪ সালে Jackar Kline এর নামকরণ করেন।)

বৈশিষ্ট্য:

১। দেহ অখন্ডকায়িত; পূর্ণাঙ্গ প্রাণী অরীয় প্রতিসম ও পাঁচকোণ বিশিষ্ট; লার্ভা দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ।

২। দেহের বহির্ভাগ চুননির্মিত কাঁটা দিয়ে আচ্ছাদিত।

৩। দেহ মৌখিক (Oral) ও বিমৌখিক (Aboral) তলে বিভেদিত।

৪। দেহের ভেতরে সিলােম নামে বিশেষ গহ্বর থেকে সৃষ্ট পানি সংবহনতন্ত্র (Water Vascular System)রয়েছে। এর সংশ্লিষ্ট নালিকা পদ (Tube feet) এদের চলন অঙ্গ।

৫। দেহের বহির্ভাগে পাঁচটি নিচু খাঁজের মতাে অ্যাম্বুল্যাকরাল খাদ (Ambulacral groove) থাকে।

উদাহরণঃ

Antodon bifida

Cenocrinus asteria

Natocrinus virile

Ptilocrinus pinnatus

Neometra acanthaster

Cucumaria planci (সমুদ্র শশা)

Thyone rubra

Ocnus planci

Holothuria impatiens

Pentagone diaphana

পর্ব- ৯ : Chordata (কর্ডাটা)

(গ্রীক, chorda = রজ্জু)

১। ভ্রূণাবস্থায় অথবা সারাজীবন পৃষ্ঠ মধ্যরেখা বরাবর দন্ডাকৃতি ও স্থিতিস্থাপক নিরেট নটোকর্ড(Notochord) থাকে উন্নত প্রাণিদের পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এটি মেরুদন্ড (Vertebral column) দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এসব প্রাণিকে তখন মেরুদন্ডী প্রাণী বলে।

২। নটোকর্ডের ঠিক উপরে লম্বা অক্ষ বরাবর ফাপা, নলাকার, স্নায়ুরজ্জু বা নার্ভকর্ড (Nerve cord) থাকে [মেরুদন্ডী প্রাণিদের ক্ষেত্রে নার্ভ কর্ডটি পরিবর্তিত হয়ে সম্মুখপ্রান্তে মস্তিষ্ক ও পশ্চাতে সুষুম্নাকান্ড (Spinal cord) গঠন করে।

৩। জীবনের যে কোনাে দশায় বা সারাজীবন গলবিলের দু’পাশে কয়েক জোড়া ফুলকা রন্ধ (Gill slits) থাকে (উন্নত কর্ডেটে ফুলকা রত্বের বিলােপ ঘটে)।

উপর্যুক্ত তিনটি মৌলিক বা অনন্য বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কর্ডেটের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে,

১। হৃদপিন্ডের অংকীয়দেশে অবস্থান। ২। মেরুদন্ডীদের দু’জোড়া পার্শ্বপদ ও তাতে অন্তঃকংকাল। ৩। পায়ু পরবর্তী পেশল ও স্থিতিস্থাপক লেজ। ৪। এন্ডােস্টাইল (Endostyle)-এর উপস্থিতি যা পরে থাইরয়েড গ্রন্থিতে রূপান্তরিত হয়। ৫। পরিপাকতন্ত্র সুস্পষ্ট পাকস্থলী ও অন্ত্রে আলাদা হওয়া।

উদাহরণঃ

Ascisia mantula

Homo sapiens Catla catla

Leave a Comment