প্রথম অধ্যায়ঃকোষ ও কোষের গঠন

কোষ

নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটোপ্লাজম নিয়ে গঠিত, ত্রিস্তরী অর্ধভেদ্য ঝিল্লী বেষ্টিত, আত্মপ্রজননে সক্ষম, জীবন্ত যা জীবদেহের গঠন ও কাজের একক তাকে কোষ বলে।জীবদেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে।

Cell (সেল) বা কোষ এর বৈশিষ্ট্য

১. জীবনের জন্য প্রয়ােজনীয় সকল গাঠনিক ও আণবিক উপাদান কোষে থাকে।

২. কোষ তার প্রয়ােজনীয় কাচামাল ভেতরে গ্রহণ করতে পারে।

৩. সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

৪. চারপাশে যে কোন উত্তেজনার প্রতি সাড়াদিতে পারে।

৫. একটি Homeostatic অবস্থা বজায় রাখতে পারে ও প্রয়ােজনে অভিযােজিত হতে পারে।

কোষের প্রকারভেদ

অবস্থান ও কার্য ভেদে কোষ দুই প্রকার যথা-

১. দেহ কোষ বা সােমাটিক কোষ।জীবের দেহ গঠন করে। এরা ডিপ্লয়েড কোষ ।

২. জনন কোষ বা রিপ্রােডাক্টিভ কোষ।জীবের জনন কোষ গঠন করে। এরা হ্যাপ্লয়েড কোষ।

নিউক্লিয়াস এর উপর ভিত্তি করে কোষ দুই প্রকার যথা-

১. আদি কোষ বা প্রােক্যারিওটিক কোষ

২. প্রকৃত কোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষ

আদি কোষ

জীবের যে সকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই তাদেরকে আদিকোষ বলে৷ আদি কোষ দ্বারা গঠিত জীবকে আদিকোষী জীব বলে।

প্রকৃত কোষ

জীবের যেসকল কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস আছে তাদেরকে প্রকৃত কোষ বলে।প্রকৃতকোষ দ্বারা গঠিত জীবকে প্রকৃতকোষী জীব বলে |

একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের গঠন

একটি উদ্ভিদ কোষে যখন সব উপাদান ও ক্ষুদ্রাঙ্গ উপস্থিত থাকে,তখন তাকে আদর্শ উদ্ভিদ কোষ বলা হয়।একটি কোষে যে সকল উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুসমূহ রয়েছে সেগুলােকে মূলতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা- (ক) জড় বস্তুসমূহ ও (খ) কোষস্থ সজীব বস্তু (প্রােটোপ্লাজম)।

জড় বস্তুসমূহের মধ্যে রয়েছে কোষ প্রাচীর এবং কোষস্থ নির্জীব পদার্থসমূহ। সজীব পদার্থগুলােকে মূলতঃ কোষঝিল্লী, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের গাঠনিক উপাদানসমূহ উপস্থাপন করা হলাে-

কোষ প্রাচীর

প্রতিটি উদ্ভিদ কোষ সাধারণত বাইরের দিকে একটি নির্জীব জড় আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। একে কোষ প্রাচীর বলে।

এ কোষ প্রাচীর প্রােটোপ্লাজমেরই নিঃসৃত দ্রব্য দিয়ে গঠিত। কোষের আকার ও আয়তন প্রধানত কোষ প্রাচীরের উপরই নির্ভর করে। কোষের কার্য, অবস্থান ও বয়স ভেদে কোষ প্রাচীর সূক্ষ্ম অথবা স্কুল, মসৃণ অথবা বিভিন্ন ধরনের কারুকার্যময় হতে পারে। কোষপ্রাচীর উদ্ভিদ কোষের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য।

ভৌত গঠন

প্রােটোপ্লাজমের নিঃসৃত দ্রব্য দিয়ে কোষ প্রাচীর গঠিত হলেও এটি নির্জীব (কূপ এলাকা) বা জড় পদার্থ। পরিণত কোষে কোষ প্রাচীর সাধারণত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- মধ্যপর্দা, প্রাথমিক প্রাচীর ও সেকেন্ডারি প্রাচীর ।

মধ্যপর্দা

দুটি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দাকে মধ্য পর্দা বলে। মধ্য পর্দা দু’টি কোষকে সংযুক্ত রাখে। এটি বিগলিত হলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়।

প্রাথমিক প্রাচীর

এটি কোষ প্রাচীরের দ্বিতীয় স্তর। মধ্যপর্দার উপর সেলুলােজ, হেমিসেলুলােজ, গ্লাইকোপ্রােটিন ইত্যাদি জমা হয়ে এ স্তর তৈরি হয়। এ স্তরটি পাতলা। সেকেন্ডারি পর্দা এবং মধ্যপর্দার ভেতরের দিকে অবস্থিত।

সেকেন্ডারি প্রাচীর

কোষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাথমিক কোষ প্রাচীরের উপর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে আর একটি স্তর তৈরি হয়। এ স্তরটি অধিকতর পুরু। এতে সাধারণত সুবেরিন, মােম, ক্যালসিয়াম অক্সালেট ইত্যাদি জমা হয়। তিনটি অংশ ছাড়াও কোষ প্রাচীরে পিট এলাকা বিদ্যমান। পিট এলাকাটি হলাে কোষ প্রাচীরের সবচেয়ে পাতলা এলাকা।

দুটি পাশাপাশি কোষের কূপ একটি অপরটির মুখােমুখি ও উল্টোদিকে অবস্থিত। কূপ দুটির মাঝখানে কেবলমাত্র একটি মধ্যপর্দা থাকে যাকে পিট মেমব্রেন বলে। মুখােমুখি দু’টি কূপকে পিট পেয়ার বলে। আসলে কূপ অঞ্চলে প্রাথমিক প্রাচীর গঠিত হয় না।

কোষ প্রাচীরের সূক্ষ্ম গঠন

প্রারম্ভিক পর্যায়ে কোষ প্রাচীরের অসংখ্য দীর্ঘ শৃঙ্খলিত সেলুলােজ অণু থাকে। এসব অণু সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে এবং একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে প্রথম পর্যায়ে পাকানাে সূতা অথবা ফিতার ন্যায় মাইসেলি গঠন করে। প্রতিটি মাইসেলির সর্বাধিক ব্যাস ১০০A এবং এতে প্রায় ১০০টি সেলুলােজ অণু থাকে। প্রায় ২০টি মাইসেলি মিলে একটি মাইক্রোফাইব্রিল গঠন করে এবং প্রায় ২৫০টি মাইক্রোফাইব্রিল মিলিতভাবে একটি ম্যাক্রোফাইব্রিল বা পূর্ণ সেলুলােজ সূত্রক গঠন করে।

কোষ প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন

মধ্যপর্দায় অধিক পরিমাণ পেকটিক অ্যাসিড থাকে। এছাড়া ক্যালসিয়াম পেকটেট এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট থাকে। একে পেকটিন বলা হয়। অল্প পরিমাণে প্রােটোপেকটিনও মধ্যপর্দায় থাকে। প্রাথমিক প্রাচীরে প্রধানত সেলুলােজ, হেমিসেলুলােজ এবং গ্লাইকোপেকটিন থাকে। সেকেন্ডারি কোষ প্রাচীরে লিগনিন (Lignin), কিউটিন, সুবেরিন,মােম, ক্যালসিয়াম অক্সালেট ইত্যাদি থাকে।

কোষ প্রাচীরের কাজ

১। কোষের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।

২। বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে প্রােটোপ্লাজমকে রক্ষা করে।

৩। প্রয়ােজনীয় শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করে।

৪। কোষের ভেতরে ও বাইরে পানি ও খনিজ লবণ যাতায়াত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে এবং

৫। কোষ গুলােকে পরস্পর থেকে পৃথক রাখে।

Leave a Comment