পর্ব- Chordata (কর্ডাটা)।Chordata পর্বের শ্রেণীবিন্যাস

পর্ব- Chordata (কর্ডাটা)

(গ্রীক, chorda = রজ্জু)

১। ভ্রূণাবস্থায় অথবা সারাজীবন পৃষ্ঠ মধ্যরেখা বরাবর দন্ডাকৃতি ও স্থিতিস্থাপক নিরেট নটোকর্ড(Notochord) থাকে উন্নত প্রাণিদের পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এটি মেরুদন্ড (Vertebral column) দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এসব প্রাণিকে তখন মেরুদন্ডী প্রাণী বলে।

২। নটোকর্ডের ঠিক উপরে লম্বা অক্ষ বরাবর ফাপা, নলাকার, স্নায়ুরজ্জু বা নার্ভকর্ড (Nerve cord) থাকে [মেরুদন্ডী প্রাণিদের ক্ষেত্রে নার্ভ কর্ডটি পরিবর্তিত হয়ে সম্মুখপ্রান্তে মস্তিষ্ক ও পশ্চাতে সুষুম্নাকান্ড (Spinal cord) গঠন করে।

৩। জীবনের যে কোনাে দশায় বা সারাজীবন গলবিলের দু’পাশে কয়েক জোড়া ফুলকা রন্ধ (Gill slits) থাকে (উন্নত কর্ডেটে ফুলকা রত্বের বিলােপ ঘটে)।

উপর্যুক্ত তিনটি মৌলিক বা অনন্য বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কর্ডেটের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে,

১। হৃদপিন্ডের অংকীয়দেশে অবস্থান। ২। মেরুদন্ডীদের দু’জোড়া পার্শ্বপদ ও তাতে অন্তঃকংকাল। ৩। পায়ু পরবর্তী পেশল ও স্থিতিস্থাপক লেজ। ৪। এন্ডােস্টাইল (Endostyle)-এর উপস্থিতি যা পরে থাইরয়েড গ্রন্থিতে রূপান্তরিত হয়। ৫। পরিপাকতন্ত্র সুস্পষ্ট পাকস্থলী ও অন্ত্রে আলাদা হওয়া।

উদাহরণঃ

Ascisia mantula

Homo sapiens

Catla catla

Chordata পর্বের শ্রেণীবিন্যাস, Chordata পর্ব ৩টি উপপর্বে বিভক্ত।

উপপর্ব ১: Urochordata (ইউরােকর্ডাটা)

গ্রীক, oura = লেজ + chorda =রজ্জু

বৈশিষ্ট্য:

১। পরিণত প্রাণীতে নটোকর্ড থাকে না, কিন্তু লার্ভা দশায় তা কেবল লেজের দিকে অবস্থিত।

২। দেহ টিউনিক (Tunic) বা টেস্ট (Test) নামক আচ্ছাদনে আবৃত।

৩। দেহের মুক্তপ্রান্তে মুখ ছিদ্র এবং কাছাকাছি অ্যাট্রিওপাের (Atriopore) অবস্থিত।

৪। পরিণত প্রাণী নিমজ্জিত বস্তুর সঙ্গে আটকে থাকে, কিন্তু লার্ভা মুক্ত সঁতারু।

উদাহরণঃ

Ascisia mantula(অ্যাসিডিয়া)

Salpa maxima(স্যালপা)

উপপর্ব ২ Cehphalochordata (সেফালােকর্ডাটা)

গ্রিক, Kephale=মাথা+chorda=রজ্জু

বৈশিষ্ট্য।

১। দেহ লম্বা,পাশ্বীয়ভাবে চাপা ও দু’প্রান্তে সরু।

২। সম্মুখ প্রান্তে ওরাল হুড (Oral hood) এবং তাতে ওরাল সিরি (Oral cirri) থাকে।

৩। নটোকর্ড দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর প্রলম্বিত।

৪। অ্যাট্রিয়াম বড়, তাতে ফুলকা রন্ধ্র উন্মুক্ত হয়।

৫। রেচনতন্ত্র গলবিল অঞ্চলে অবস্থিত সােলেনােসাইটযুক্ত নেফ্রিডিয়া নিয়ে গঠিত।

৬। দেহের দুপাশে “>” আকারের মায়ােটম (Myotome) পেশী পরপর সজ্জিত।

উদাহরণ: Branchiostoma lanceolatum (ব্র্যাঙ্কিওস্টোমা)।

উপপর্ব ৩: vertebrata (ভার্টিব্রাটা)

ল্যাটিন, vertebratus = মেরুদন্ড

বৈশিষ্ট্য।

১। নটোকর্ডটি কশেরুকা বিশিষ্ট মেরুদণ্ড’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত।

২। পৃষ্ঠীয় ফাপা স্নায়রজু মস্তিস্ক ও সুষুম্মা কান্ড গঠন করে এবং যথাক্রমে ক্রেনিয়াম ও মেরুদণ্ডে আবদ্ধ থাকে।

৩। গলবিলীয় ফুলকা র সাধারণত ৪-৬ জোড়া এবং উন্নততর প্রাণীতে কেবল ভূণেই থাকে।

৪। সুগঠিত হৃদপিন্ড দিয়ে রক্ত সংবহনতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয়।

৫। বৃক্ক প্রধান রেচন অঙ্গ।

৬। পার্শ্বীয় জোড় পাখনা বা পদ চলন অঙ্গ।

উদাহরণঃ Homo sapiens

vertebrata উপপর্বের (মেরুদণ্ডী প্রাণিদের) শ্রেণীসমূহ

প্রখ্যাত কর্ডেট প্রাণিবিজ্ঞানী রােমার (Romer. ১৯৬২)-এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী মেরুদন্ডী প্রাণিদের নিচে

বর্ণিত ৭টি শ্রেণী (Class)-র অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

শ্রেণীঃ Myxini

বৈশিষ্ট্য

১ মুখ প্রান্তীয় ও ৪ জোড়া কর্ষিকাযুক্ত।

২। ৫-১৫ জোড়া গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র থাকে।

৩।নাসাথলি মুখ গহ্বরে উন্মুক্ত।

উদাহরণঃ- Myxine glutinosa

শ্রেণীঃ Cephalaspidomorphi

বৈশিষ্ট্য

১। হর্ণি পাতযুক্ত , চোষন ক্ষমতাসম্পন্ন মুখ।

২। ৭ জোড়া ফুলকা রন্ধ্র থাকে।

৩। নাসিকা থলি মুখ গহ্বরে উন্মুক্ত নয়।

উদাহরণঃ- Petromyzon marinus

শ্রেণী ২ঃ Chondrichthyes (কনড্রিকথিস্, )

গ্রীক, chondros = তুরুণাস্থি + ichthyes = মাছ– তরুণাস্থিময় মাছ

বৈশিষ্ট্য।

১। দেহ প্ল্যাকয়েড (Placoid) ধরনের আঁইশে আবৃত।

২। মুখ অংকীয় ও দাতাল।

৩। অন্তঃকংকাল তরুণাস্থিময় (Cartilaginous)।

৪। মাথার দু’পাশে ৫-৭ জোড়া ফুলকা-ছিদ্র পৃথকভাবে বাইরে উন্মুক্ত।

৫।লেজ হেটারােসারকাল

(FHeterocercal) ধরনের (অর্থাৎ পুচ্ছপাখনার অংশদুটি অসমান)।

৬। প্রায় সবাই সামুদ্রিক।

উদাহরণ Scoliodon sorrakowah(হাঙ্গর)

Pristis pectinata(করাত মাছ)

Pristis pectinata (করাত মাছ)।

Sphyrna zyaena (হাতুরী হাঙ্গর)

Torpedo torpedo(ইলেকট্রিক মাছ)

শ্রেণি ৩ : Actinopterygii

বৈশিষ্ট্য

(i) অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়।

(ii) এদের দেহ সাইক্লয়েড (cycloid) অথবা টিনয়েড (ctenoid)ধরনের আঁইশ দ্বারা আবৃত।কোন কোনাে মাছের আঁইশ থাকে না ।

(iii) মুখছিদ্র অগ্রপ্রান্তে অবস্থিত। পুচ্ছ পাখনা হােমােসার্কাল (দুটি অংশ সমান)। (fin))

(iv) মাথার দু’পাশে একটি করে ফুলকার থাকে, যা কানকো (operculum) দিয়ে আবৃত। পটকা বা বায়ুথলি (swim bladder) বিদ্যমান।

(v) এরা একলিঙ্গ প্রাণী, বহি:নিষেক ঘটে

উদাহরণঃ Catla catla

শ্রেণি : Sarcopterygii

বৈশিষ্ট্য

(i) অন্তঃকঙ্কাল অস্থি নির্মিত।

 (ii) দেহ গ্যানয়েড (ganoid)ধরনের আঁইশে আবৃত।

(ii) পুচ্ছ পাখনা ডাইফিসার্কাল (পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় পাখনা একীভূত হয়ে গঠিত হয়)।

(iv) উদর গহ্বরে পটকা উপস্থিত, ফুলকারন্ধ্র কানকো দ্বারা আবৃত থাকে।

উদাহরণঃ- Latimeria chalumnae, Neoceratodus forsteri(ফুসফুসযুক্ত মাছ)

শ্রেণি : Amphibia(অ্যাম্ফিবিয়া)

বৈশিষ্ট্য

(i) লার্ভাদশায় ফুলকা এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় ফুসফুস দ্বারা শ্বাসকার্য চালায়।

 ii) দেহত্বক নগ্ন, ভেজা ও গ্রন্থিময়।

(iii) অগ্রপদে চারটি ও পশ্চাৎপদে পাঁচটি, নখরবিহীন আঙুল আছে।

(iv) শীতল রক্তবিশিষ্ট, অলিন্দ দুটি ও নিলয় একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।

(v) হৃৎপিণ্ড তিন প্রকোষ্ট বিশিষ্ট।

(vi) নিষেক বাহ্যিক

(vii) করােটিক স্নায়ু ১০ জোড়া ।

উদাহরণঃ- Duttaphrynus melanostictus(কুনোব্যাঙ)

শ্ৰেণী-৫ : Reptilia (রেপটিলিয়া)

ল্যাটিন, freptilis = হামাগুড়ি-সরিসৃপ

বৈশিষ্ট ঃ

১। ত্বক শুষ্ক এবং এপিডারমাল আঁইশে আবৃত।

২। দু’জোড়া পদের প্রতিটিতে পাঁচটি করে নখরযুক্ত আঙ্গল আছে।

৩। হৃদপিন্ড অসম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট-দুটি অলিন্দ ও একটি অসম্পূর্ণ বিভক্ত নিলয় কুমীরে চার

প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট)

৪। অবসারণী ছিদ্র আড়াআড়িভাবে অবস্থিত।

৫। দেহের শেষভাগে সাধারণত লেজ থাকে।

উদাহরণঃDraco volans (উরুক্কু গিরগিটি) Hemidactylus brooki (টিকটিকি) Varanus bengalensis(গুইসাপ) Chrysemys picta, Crocodylus palustris (কুমির)

শ্রেণী- ৬ Aves (অ্যাভিস)

ল্যাটিন , avis = পাখি–পাখি

বৈশিষ্ট্যঃ

১। দেহ পালক (Feather) দিয়ে আবৃত ।

২। অগ্রপদ-দুটি ডানায় রূপান্তরিত ।

৩। ওষ্ঠ দুটির অগ্রভাগ প্রলম্বিত চঞ্চু (Beak)-তে পরিণত হয়েছে।

৪। দেহকে হালকা করবার জন্য দেহাভ্যন্তরে বায়ুথলি (Air bladder) রয়েছে।

৫। অস্থি হালকা এবং নিউম্যাটিক (অর্থাৎ স্পঞ্জি বা বাতাস যুক্ত)।

৬। বক্ষে উভয়ন পেশী বিদ্যমান।

উদাহরণ : Struthio camelus (উটপাখি), Gyps bengalensis (শকুন), Copsychus saularis(দোয়েল),Bubulcus ibis,Corvus splendens (কাক), Passer domesticus (চড়ুই)

শ্রেণী ৭. Mammalia (ম্যামালিয়া)

ল্যাটিন , mamma = স্তন)—স্তন্যপায়ী।

বৈশিষ্ট্য :

১। দেহ লােম (hair)-এ আবৃত।

২। পরিণত স্ত্রী-প্রাণীতে কার্যকরী স্তন গ্রন্থি (Mammary gland) থাকে; নবজাতক মাতৃস্তন দুধে লালিত

হয়।

৩। ত্বকে নানা ধরনের গ্রন্থি (ঘর্ম গ্রন্থি , সিবেসাস গ্রন্থি) থাকে

৪। চোয়ালে বিভিন্ন ধরণের দাঁত থাকে।

৫। মস্তিষ্ক উন্নত ; এতে কর্পাস ক্যালােসাম থাকে।

৬। বহিঃকর্ণ বা পিনা থাকে।

৭। বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরের মাঝখানে পেশীবহুল ডায়াফ্রাম পাওয়া যায়।

৮। পরিণত লােহিত কণিকা নিউক্লিয়াসবিহীন।

উদাহরণ : Panthera tigris (বাঘ), Panthera leo (সিংহ) ,Ornithorhynchus anatinuus

(প্লাটিপাস), Balaenoptera musculuts (নীল তিমি), Gorilla gorilla (গােরিলা) , Equus caballus

(ঘােড়া), Equus zebra (জেব্রা) , Bandicota bengalensis (ইদুর) , Homo sapiens (মানুষ)।

সকল মেরুদন্ডী প্রাণীই কর্ডেট, কিন্তু সকল কর্ডেট মেরুদন্ডী নয়

কর্ডেট প্রাণীর তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-স্থিতিস্থাপক নটোকর্ড, পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু এবং গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র। এসব বৈশিষ্ট্য সবধরনের কর্ডেট প্রাণীর জীবনের যে কোনাে দশায় কিংবা আজীবন পাওয়া যায়।

Chordata পর্বের দুটি উপপর্ব যেমন— Urochordata ও Cephalochordata (অর্থাৎ Protochordata)-র সদস্যদের ক্ষেত্রে কর্ডাটার বৈশিষ্ট্যগুলাে আজীবন পাওয়া যায়। কিন্তু Vertebrata উপপর্বের ক্ষেত্রে ভ্রূণাবস্থায়

নটোকর্ড থাকলেও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় তা কশেরুকা নির্মিত মেরুদন্ড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। সেজন্য এদের মেরুদন্ডী প্রাণী বলে। তা ছাড়া স্নায়ুরজুটি মস্তিষ্ক ও সুষুম্নকান্ড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়; ফুলকা রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং ফুলকা বা ফুসফুসের আবির্ভাব ঘটে। তাই বলা যায় সকল মেরুদন্ডী প্রাণীই কর্ডেট (কারণ ভ্রূণাবস্থায় কর্ডাটার সকল বৈশিষ্ট্য থাকে) কিন্তু সকল কর্ডেট মেরুদন্ডী নয় (কারণ Urochordata ও Cephalochordata উপপর্বের প্রাণিদের নটোকর্ড কখনােই মেরুদন্ড দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয় না)।

Leave a Comment