বিবর্তন এর প্রমাণসমূহ

বিবর্তন এর প্রমাণসমূহ (Evidences of Evolution)

বিবর্তনের স্বপক্ষে স্বাক্ষ্য বা তথ্য বা প্রমাণ অফুরন্ত। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য প্রমাণগুলাে হলাে- ১। অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ, ২। ভ্রূণতত্ত্বীয় প্রমাণ, ৩। জীবাশ্মগত প্রমাণ, ৪। ভৌগােলিক প্রমাণ, ৫। শারীরবৃত্তীয় প্রমাণ, ৬। শ্রেণিবিন্যাসগত প্রমাণ, ৭। পরীক্ষামূলক প্রমাণ, ৮। জিন তত্ত্বীয় প্রমাণ ও ৯। অভিযােজনঘতিত প্রমাণ।

এদের সম্পর্কে সংক্ষেপে নিম্নে আলােচনা করা হলাে-

১। অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ (Morphological evidence)

জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্র দ্বারা বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণের ব্যাখ্যাদানকে অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ বলে। অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ

দুইটি জীবের মধ্যে অবস্থিত একই ধরনের অঙ্গের পার্থক্যগুলাে উল্লেখ করে বিবর্তনের ধারা নির্দেশ করাকে তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ বলে।

মেরুদণ্ডী প্রাণীকূলে এরূপ অনেক অঙ্গের অবস্থান দেখা যায়। ধরা যাক, মাছ, ব্যাঙ এবং গিনিপিগ তিনটি মেরুদণ্ডী প্রাণী। বিবর্তনবিদদের ধারণা এই তিনটি প্রাণীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা আদি এবং বিবর্তন দ্বারা কালের পরিবর্তনে মাছ থেকে ব্যাঙ এবং গিনিপিগ সৃষ্টি হয়েছে। এই বিবর্তনের প্রমাণ এদের কতকগুলাে অঙ্গের তুলনামূলক আলােচনা হতে পাওয়া যায়।

মাছের হৃৎপিণ্ডে মাত্র দুইটি প্রকোষ্ঠ (১ অরিকল এবং ১ভেন্ট্রিকল) আছে । এটি বিবর্তনের দ্বারা ব্যাঙে সৃষ্টি করেছে তিন প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হৃৎপিন্ড (২ অরিকল এবং ১ ভেন্টিকল)। এরই বিবর্তনে গিনিপিগি তৈরি হয়েছে চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্টি হৃৎপিন্ড (২ অরিকল এবং ২ ভেন্ট্রিকল)।

খ. সমসংস্থ ও অসমসংস্থ অঙ্গভিত্তিক প্রমাণ

উৎপত্তির দিক থেকে একই ধরনের কিন্তু কার্যগতভাবে পৃথক এরূপ অঙ্গকে সমসংস্থ (homologous) অঙ্গ বলে।

পাখির ডানা, গরুর অগ্রপদ এবং মানুষের হাত একইভাবে উৎপন্ন হয়েছে। উপাঙ্গগুলােতে হিউমেরাস, রেডিওআলনা বিদ্যমান। কিন্তু কাজের তারতম্যের কারণে এদের বাহ্যিক আকৃতি ভিন্ন হয়েছে। এটি বিবর্তনের জন্যই হয়েছে। এরূপ বিবর্তনকে কেন্দ্ৰাপসারী (divergent) বিবর্তন বলে।

উৎপত্তিগতভাবে ভিন্ন কিন্তু একই ধরনের কাজ সম্পাদন করে এমন অঙ্গকে অসমসংস্থ অঙ্গ (Analogous organ) বলে। তেলাপােকা ও পাখির ডানা এরূপ দুটি অঙ্গ। অঙ্গদ্বয়ের মধ্যে উৎপত্তিগত কোন সামঞ্জস্য নেই তবে উভয় অঙ্গই একই ধরনের কার্য সম্পাদন করে।

এরূপ বিবর্তনকে কেন্দ্রাভিমুখী বিবর্তন (convergent evolution) বলে।

গ. নিষ্ক্রিয় অঙ্গাবলী দ্বারা প্রমাণ

আদি প্রাণীতে ছিল অথবা এখনও আছে, কিন্তু তা থেকে উন্নত প্রাণীকূলে অলুপ্তির মুখে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হিসেবে এখনাে বিবর্তনের স্বাক্ষী বহন করে এরূপ অঙ্গকে লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ (vestigial organ)বলে।

একমাত্র মানব দেহেই প্রায় দুই শতাধিক নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বিদ্যমান। এই অঙ্গগুলাে এক সময় আদি প্রাণীতে সক্রিয় ছিল। মানুষের কানের পেশি, অ্যাপেন্ডিক্স, পুচ্ছ-দেশীয় কশেরুকা বা কক্কিক্স এরূপ কয়েকটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ। গিনিপিগ, গরু ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এদের সক্রিয় ভূমিকা এখনাে দৃষ্ট হয়। গরু এর কান নাড়াতে পারে কিন্তু মানুষ তা পারে না।

লেজের কশেরুকাগুলাে একত্রিত হয়ে ছােট অস্থি পিণ্ড বা কক্কিক্স হিসেবে মেরুদণ্ডের পশ্চাৎ প্রান্তে এখনাে অবস্থান করছে। পরিবেশগত কারণে মানুষে এই সকল অঙ্গাবলী প্রয়ােজনে না আসায় বিবর্তন দ্বারা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে।

২। ভ্রূণতত্ত্বীয় প্রমাণ (Embryological evidence)

ডিমের পরর্দার ভিতরে অথবা মাতৃগর্ভে যতদিন একটি নিষ্ক্রিয় ডিম বৃদ্ধি পায় ততদিন প্রাণীর ঐ অপরিণত অবস্থাকে ভ্রূণ বলে।

ভ্রূণের এককোষী বা আদি অবস্থাকে জাইগােট বলে। বহুকোষী প্রথম অবস্থাকে মরুলা, একস্তরী ফাঁপা অবস্থাকে ব্লাস্টুলা এবং দ্বিস্তরী অবস্থাকে গ্যাস্ট্রুলা বলে।

বিজ্ঞানী হেকেল (Haekal,1966) মনে করেন যদি একটি প্রাণী অপর কোন একটি প্রাণী হতে উদ্ভব হয়ে থাকে, তবে উদ্ভুত প্রাণীটি এর ভূণের বিপরিণতিতে আদি প্রাণীর পরিণত অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলাে পুনরাবৃত্তি করবে। সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়- ব্যক্তিজনি জাতিজনির বৈশিষ্ট্য পুনরাবৃত্তি করে (ontogeny ecapitulates phylogeny)। একে হেকেল এর পুনরাবৃত্তিবাদ (theory of recapitulation of Haeekal) বলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মাছ জাতীয় প্রাণী হতে মানুষের উদ্ভব হয়ে থাকে তবে মানুষের ভ্রূণ অবস্থায় পরিণত মাছের আকৃতি দেখা দিবে। শুধু মানুষই নয়, সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীই হইতে উদ্ভব হয়েছে।

ভ্রূণের পর্যায়গুলাে তার সাক্ষ্য বহন করে। সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীতে জাইগােট অর্থাৎ এককোষী প্রাণীর অবস্থা মরুলা ভলভক্স অবস্থা , ব্লাস্টুলা বা পরিফেরা পর্বের প্রাণীর অবস্থা, গ্যাস্টুলা বা নিডারিয়া পর্বের প্রাণীর অবস্থা বিদ্যমান। মেরুদণ্ডী প্রাণী নিম্নস্তরের বিভিন্ন পর্বের প্রাণী হতে পর্যায়ক্রমে যদি বিবর্তন দ্বারা উদ্ভূত না হতাে তবে এদের ভূণ অবস্থায় কখনােই ঐ পর্যায়গুলাের পুনরাবৃত্তি ঘটতাে না। সকল প্রাণীর ভ্রূণের প্রথম অবস্থা প্রায় একই ধরনের।

কিন্তু পরিণত প্রাণীগুলাে কেউই কারাে সাথে আকৃতিগত সাদৃশ্য বহন করে না। এতেও প্রমাণ হয় যে, ঐ সকল প্রাণী মূলত একই আদি প্রাণী হতে সৃষ্ট। বিবর্তনের জন্য এরা পরবর্তীতে ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। ভন-বেয়ার (Von Bare) সর্বপ্রথম ভ্রূণের মধ্যে এই সাদৃশ্য লক্ষ করেন।

৩। ভৌগােলিক বিস্তারগত প্রমাণ (Evidence from geographical distribution)

উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভৌগােলিক বিস্তার বিবর্তন সংঘটনের সাক্ষ্য বহন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের নানা প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই পরিলক্ষিত হয়। বিবর্তনবিদগণ একে জৈব অভিব্যক্তির প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

বিবর্তনবিদগণ মনে করেন যে, পৃথিবীর বর্তমান মহাদেশগুলাে প্রথমে একটি একক বা অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড ছিল। পরে সুদীর্ঘকালের নৈসর্গিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাদেশসমূহের সৃষ্টি করেছে। সম্ভবতঃ প্রথমে পৃথিবীর সর্বত্র একই পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহ অনুরূপ ছিল।

কিন্তু পরবর্তীকালে পরিবর্তনের ফলে বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে বিভিন্ন প্রকার জীব দেখা যায়। ভূতাত্ত্বিক তথ্য নির্দেশ করে যে, এককালে অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আমেরিকার সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় এমন কিছু প্রাণী দেখা যায় যা দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে দেখা যায় না।

এর সম্ভাব্য কারণ এই যে, বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দুইটি মহাদেশে ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের পরিবর্তন হয় এবং অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবের গঠন প্রকৃতিরও রূপান্তর হয়। আবার অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার মারসুপিয়াল বা ক্যাঙ্গারুজাতীয় প্রাণীগুলাে মূলতঃ অনুরূপ কিন্তু ভৌগােলিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এরা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে।

এ থেকে অনুমান করা হয় যে, উভয় মহাদেশের মারসুপিয়ালগুলাে একই পূর্ব পুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

৪। শারীরবৃত্তীয় প্রমাণসমূহ (Physiological evidence)

বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত এবং দানা (blood crystal) পরীক্ষা করে এদের পরস্পর সম্পর্ক নিরূপণ করা যায়। যেমন- মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর রক্তে অনুরূপ হিমােগ্লোবিন দানা দেখা যায়।

এদের হিমােগ্লোবিন দানাগুলাে কুকুর ও অশ্বের হিমােগ্লোবিন দানা থেকে ভিন্ন ধরনের। অগ্ন্যাশয় হতে ট্রিপসিন নামক এক প্রকার এনজাইম নিঃসৃত হয়। মানুষ ও বানরের ট্রিপসিন অনুরূপ। এটি বানরের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্কের পরিচায়ক।

ভিন্ন  ধরনের প্রাণীর ভিতর এইরূপ যােগসূত্র আভাস দেয় যে, সম্ভবত ইহারা একই পূর্ব পুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

৫। শ্রেণিবিন্যাসগত প্রমাণ (Taxonomic evidence)

 সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সকল জীবকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যেমন- সকল এককোষী জীবকে প্রােটোজোয়া, দ্বিস্তরী প্রাণীকে নিডারিয়া পর্বে, নটোকর্ডধারী প্রাণীদের কর্ডাটা পর্বে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

একটি পর্বের সকল প্রাণীর উৎপত্তিগত সাদৃশ্য থাকায় এদেরকে একই পর্বে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু একটি পর্বের সকল প্রাণীর আকৃতি একই ধরনের হয় না। গঠনগত এরূপ পার্থক্যের কারণ এদের বিবর্তন।

কর্ডাটা পর্বে সকল প্রাণীতে নটোকর্ড থাকলেও প্রাণীগুলাে সকলেই একই ধরনের হয় না। নটোকর্ডের উপস্থিতি এদের উৎপত্তির দিক নির্দেশ করে, আবার এদের বিভিন্নতা বিবর্তনের দিক নিদের্শক।

৬। জিনতত্ত্বীয় বা সুপ্রজননবিদ্যাঘটিত প্রমাণ (Genetical eveidence)

জীবের দৈহিক গুণের আঁধার ক্রোমােসােমে অবস্থিত জিন। জিন পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রেখে এর গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, যদি কোন উপায়ে জিনের গুণগত পরিবর্তন ঘটানাে সম্ভব হয়, তবে ঐ জিন বহনকারী জীবটির দৈহিক লক্ষণেও পরিবর্তন আসে।

সুপ্রজননবিদগন রঞ্জন রশ্মি প্রয়ােগে অথবা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ প্রয়ােগে জিন পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। স্বল্প সময়ে কৃত্রিম উপায়ে জিনে যে পরিবর্তন আসে তা প্রাকৃতিক নিয়মে আসতে পারে। এতে হয়তাে বেশি সময় লাগবে।

৭। জীবাশ্মগত প্রমাণ (Palaeontological Evidence)

জীবাশ্ম বা ফসিল (Fossil), ল্যাটিন Fossilis শব্দ থেকে ইংরেজি Fossil শব্দের উৎপত্তি। Fossilis শব্দের অর্থ হলাে dug out বা খুড়ে তােলা। পূর্বে মাটি খুড়ে যা কিছু তােলা হতাে তাকেই জীবাশ্ম বা ফসিল বলা হতাে।

বর্তমানে, পৃথিবীর ভূত্বকে (crust) প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত প্রাগৈতিহাসিক জীবের দেহ, দেহাবশেষ বা দেহের কোন অংশের চিহ্ন বা সাক্ষ্যকে জীবাশ্ম বা ফসিল বলা হয়।

Stickberger (১৯৯৮) এর মতে “Fossilis are geological remains, impressions or trace of organisms that existed in the past” 217sfogliste জীবের সাক্ষ্য বা চিহ্ন হিসেবে মােল্ড (mold), কাস্ট (cast), হাত বা পায়ের ছাপ, গমন পথ (track), ট্রেইল (trail), গর্ত(boring), মলাশ্ম বা কপ্রােলাইট (coprolite) কে জীবাশ্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গমন পথ, ট্রেইল এবং জীবজনিত গর্তকে ট্রেস ফসিল (trace fossil) বা ইকনােফসিল (ichnofossil) বা জার্মান ভাষায় লেবেনসুরেন (lebenspuren) নামে আখ্যায়িত করা হয়। জীবাশ্মগত বিদ্যাকে জীবাশ্মবিদ্যা বা প্যালেন্টোলজি (palaeontology) বলা হয়।

বিবর্তনের সর্বাপেক্ষা নির্ভরযােগ্য এবং প্রামাণিক সাক্ষ্য (উপাদান) হচ্ছে জীবাশ্ম। জীবাশ্ম সম্পর্কিত জ্ঞান সংগ্রহ করতে হলে ভূ-পৃষ্ঠের শিলাস্তর সম্বন্ধেও জ্ঞান লাভ করতে হয় বলে বিবর্তনের এই প্রমাণকে ভূতত্ত্বীয় প্রমাণ (geological evidence) ও বলা হয়।

কালের পরিবর্তনে পৃথিবীর বুকে বহু জীব ধ্বংস হয়ে গেছে। শিলার বিভিন্ন স্তরে চাপা পড়ে অনেকেই জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে। শিলার বিভিন্ন স্তর হতে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায়। একটি বিশেষ স্তরে প্রাপ্ত জীবাশ্ম যার অর্থ হলাে পৃথিবীর ঐ সময় কালে এটি জীবিত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন শিলাস্তর থেকে ঘােড়া, হাতী, উট, মানুষ ইত্যাদির যে জীবাশ্ম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে সাজালে ঐ সকল প্রাণীর ক্রমবিবর্তন সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণা করা সম্ভব হয়।

জীবাশ্মের এইরূপ রেকর্ড হতে দেখা যায় যে, ৬ কোটি বছর পূর্বে ইয়ােসিন যুগে উত্তর আমেরিকায় এবং ইউরােপে প্রাপ্ত ১১ ইঞ্চি উচ্চতাবিশিষ্ট শৃগাল আকৃতির ইয়ােহিপ্পাস (Eohippus) নামক প্রাণী হতে আধুনিক ঘােড়া ইকুয়াস (Equus) এর উদ্ভব হয়েছে। ইয়ােহিপ্পাস এর অগ্রপদে চারটি এবং পশ্চাৎ পদে তিনটি করে আঙুল ছিল। ক্রমবিকাশের মাধ্যমে ইয়ােহিপ্পাস পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস করে, দেহের আকৃতির বৃদ্ধি এবং দাতের সংখ্যা ও গঠনে পরিবর্তন এনে বর্তমান ইকুয়াস তথা আধুনিক ঘােড়াটির সৃষ্টি করে।

যে সকল ধাপের মাধ্যমে ইয়ােহিপ্পাস ইকুয়াসে বা আধুনিক ঘােড়ায় রূপান্তরিত হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলােঃ

ইয়ােহিপ্পাস……..আরােহিপ্পাস….. মেসােহিপ্পাস………..প্লিওহিপ্পাস………ইকুয়াস (আধুনিক ঘােড়া)

Leave a Comment