ডিএনএ (DNA)।ডিএনএ-এর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন

ডিএনএ (DNA)

স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম, সকল প্রকার জৈবিক কার্যের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, যা সজীব কোষে অবস্থিত থাকে তাকে DNA বলে।

ডিঅক্সিরাইবােনিউক্লিক অ্যাসিড এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলাে ডিএনএ। ডিএনএ এর গাঠনিক একক নিউক্লিয়ােটাইড। এটি একটি বৃহদাণুর জৈব অ্যাসিড যা জীবনের আণবিক ভিত্তি। প্রকৃত কোষের ক্রোমােসােমের মূল উপাদান ডিএনএ। কতক ভাইরাসে ডিএনএ থাকে। এটি সাধারণত সূত্রাকার কিন্তু আদি কোষ,মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরােপ্লাস্টে এর আকার বৃত্তের ন্যায়।

ডিএনএ-এর ভৌত গঠন

J.D. Watson এবং Francis HC.Crick ডিএনএ অণুর গঠনের ডাবল হেলিক্স মডেল প্রস্তাব করেন। এই মডেল টি সর্বাধুনিক এবং সঠিক মডেল হিসেবে সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত। M.E.H Wilkins রঞ্জক রশ্মির মাধ্যমে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স মডেল প্রমাণ করেন। এর জন্য তিন জন বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে নােবেল পুরস্কার পান।

Watson-Crick প্রদত্ত ডাবল হেলিক্স মডেল অনুযায়ী ডিএনএ অণুর গঠন বৈশিষ্ট্য:

১। DNA দ্বিসূত্রক, বিন্যাস ঘুরানাে সিড়ির ন্যায়।

২। সিঁড়ির দুদিকের ফ্রেম তৈরি হয় স্যুগার ও ফসফেটের পর্যায়ক্রমিক (Alternate) সংযুক্তির মাধ্যমে।

৩। দু’দিকের ফ্রেমের মাঝখানের প্রতিটি ফ্রেম তৈরি হয় একজোড়া নাইট্রোজিনাস বেস দিয়ে (A=T, G=C)।

৪। দুটি বেস হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত হয়। কাজেই সিড়ির বাইরের দিকে থাকে ফসফেট এবং ভেতরের দিকে থাকে নাইট্রোজিনাস বেস।

৫। সিড়ির দু’পাশের ফ্রেম পরস্পর উল্টোভাবে অবস্থান করে। এ ধরনের বিন্যাসকে অ্যান্টিপ্যারালেল (Antiparallel)বিন্যাস বলে।

৬। এক ফ্রেমের গুয়ানিন অপর পাশের ফ্রেমের সাইটোসিনের সাথে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত হয় (G=C)। এক ফ্রেমের অ্যাডিনিন অপর পাশের ফ্রেমের থাইমিনের সাথে দুটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে সংযুক্ত থাকে (A=T)।

৭। সিঁড়ির (প্রকৃত পক্ষে ডবল হেলিক্স-এর) প্রতিটি ঘূর্ণন ৩৪A` দূরত্ব বিশিষ্ট এবং এ দূরত্ব ১০টি মনােনিউক্লিয়ােটাইড দিয়ে তৈরি হয়। কাজেই প্রতিটি মনােনিউক্লিয়ােটাইডের দৈর্ঘ্য ৩.৪A`।

ডিএনএ-এর রাসায়নিক গঠন

ডিএনএ এর রাসায়নিক উপাদানগুলাে হলাে-

১। পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট ডিঅক্সিরাইবােজ স্যুগার (কার্বনের ২নং স্থানে অক্রিজেন অনুপস্থিত বিধায় ডিঅক্সি বলা হয়),

২। ফসফোরিক অ্যাসিড

৩। নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক (অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন এবং থাইমিন)।

ডিএনএ-এর কাজ

১। ক্রোমােসােমের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

২। বংশগতির আণবিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

৩। জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।

৪। জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশপরম্পরায় অধঃস্তন প্রজন্মে স্থানান্তর

৫। জীবের সকল শারীরতাত্ত্বিক ও জৈবিক কাজ কর্মের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

৬। জীবের পরিবৃত্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

৭। ডিএনএ এবং তার হেলিক্সের কোন অংশে গােলযােগ দেখা দিলে তা মেরামত করে নিতে সক্ষম।

Leave a Comment