ট্রান্সক্রিপশন।ট্রান্সলেশন।

ট্রান্সক্রিপশন

ডিএনএ (DNA) থেকে আরএনএ (RNA) সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ট্রান্সক্রিপশন বলে। প্রােটিন সংশ্লেষণের আগে ডিএনএ অণু বহনকারী রাসায়নিক তথ্যগুলােকে আরএনএ অণুতে কপি হয়।

ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া

ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

(ক) প্রারম্ভিক বা সূচনা পর্যায়(Initiation),

(খ) সূত্র বর্ধিতকরণ পর্যায় (Elongation),

(গ) সমাপ্তিকরণ পর্যায় (Termination) এবং

(ঘ)প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায় (Processing)।

(ক) প্রারম্ভিক বা সূচনা পর্যায়

প্রারম্ভিক পর্যায়ে RNA পলিমারেজ নামক এনজাইম দ্বিসূত্ৰক DNA এর একটি সূত্রের’Promoter region’ বা উদ্যোগী অঞ্চলে যুক্ত হয়। এ সংকেত পেয়ে দ্বিসূত্রক DNA এর কিছু অংশ প্যাঁচমুক্ত হয় এবং হাইড্রোজেন বন্ধনীগুলাে ভেঙ্গে যায়।

খুলে যাওয়া DNA সূত্রকের একটিকে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে ট্রান্সক্রিপশন হয় এবং অন্যটি এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

(খ) সূত্র বর্ধিতকরণ পর্যায়

আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম”Base pairing rule’ বা ক্ষার জোড়ের নিয়মানুযায়ী (A এর সঙ্গে T আর C এর সঙ্গে G)একটির পর একটি নিউক্লিয়টাইড সংযুক্ত করতে থাকে। mRNA তে থাইমিনের (T) বদলে ইউরাসিল (U)সংশ্লেষিত আরএনএ পলিমারেজ ডিএনএ সূত্র ধরে ৩-৫ প্রান্তের দিকে এগিয়ে যায় ফলে mRNA সূত্র সংশ্লেষিত ও লম্বা হয়।

(গ) সমাপ্তিকরণ পর্যায়

DNA ছাঁচ সূত্রকে ট্রান্সক্রিপশন সমাপ্তিকরণ স্থান সুনির্দিষ্ট থাকে। RNA পলিমারেজ ঐ সমাপ্তিকরণ স্থানে পৌঁছানাের সাথে সাথে DNA সূত্র থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে।

(ঘ) প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়

নব্য সংশ্লেষিত mRNA সূত্রকটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ গঠনপর্যায়ে উপনীত হয়। (যাকে Pre mRNA স্প্লাইসিং বলে)প্রক্রিয়াজাতকৃত mRNA সূত্রকটি নিউক্লিয়ার রন্ধ্রপথে বেরিয়ে সাইটোপ্লাজমে আসে এবং সেখানে রাইবােসােম, tRNA ও অন্যান্য এনজাইমের সহায়তায় প্রােটিন তৈরি করে।

অন্যদিকে উন্মুক্ত DNA সূত্র দুটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

ট্রান্সলেশন

DNA এর অংশ বিশেষ (তথা জিন) থেকে বংশগতির সংকেতসমূহ বহন করে সাইটোপ্লাজমে নিয়ে আসে mRNA এবং এ সংকেতসমূহের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় প্রােটিন অণু। mRNA এর সংকেত অনুযায়ী প্রােটিন অণু তৈরির প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সলেশন।

ট্রান্সলেশনে mRNA ছাড়াও রাইবােসােম, tRNA, বিভিন্ন অ্যামাইনাে অ্যাসিড,এনজাইম, কো-এনজাইম, ATP ইত্যাদি উপাদান দরকার হয়।

ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া

ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া মূলত চারটি ধারাবাহিক পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। এগুলাে হলাে-

(ক) প্রােটিন সংশ্লেষণের সূচনা (Initiation),

(খ) পলিপেপটাইড শৃঙ্খল বৃদ্ধি (Elongation),

(গ) শৃঙ্খল বর্ধণের সমাপ্তি (Temination), এবং

(ঘ) ট্রান্সলেশন পরবর্তী প্রক্রিয়াজাতকরণ (Post transcriptional processing)।

(ক) প্রােটিন সংশ্লেষণের সূচনা

প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ রাইবােসােম দুটি অসম উপ-এককের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি mRNA তে ৫ প্রান্তে একটি প্রারম্ভিক সংকেত বা কোডন এবং ৩ প্রান্তে একটি সমাপ্তি কোডন থাকে। প্রােটিন সংশ্লেষণের শুরুতে mRNA তার ৫ প্রান্তের সাহায্যে প্রথমে রাইবােসােমের ক্ষুদ্র উপএককের সাথে যুক্ত হয়।

এরপর বড় উপএকক এবং প্রারম্ভিক tRNA এর সহায়তায় একটি প্রারম্ভিক জটিল(Complex) গঠন তৈরি করে।

(খ) পলিপেপটাইড শৃঙ্খল বৃদ্ধি

প্রারম্ভি mRNA পরবর্তী কোডনের দিকে এগিয়ে আসে ফলে একটির পর একটি কোডন রাইবােসােমের ভেতরে প্রবেশ করে সম্পূরক কোডনগুলাের সাথে এন্টিকোডনের মাধ্যমে জোড় বাঁধে।

পরবর্তীতে এনজাইমের সহায়তায় বহনকৃত অ্যামাইনাে অ্যাসিডগুলােকে পলিপেডটাইড বন্ধনী দ্বারা সংযুক্ত করে।

এভাবে mRNA কর্তৃক বহনকৃত সংকেত অনুযায়ী একটির পর একটি অ্যামাইনাে অ্যাসিড যুক্ত হয়ে একটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল তৈরি করে।

(গ) শৃঙ্খল বর্ধণের সমাপ্তি

mRNA এর সমাপ্তি কোডন যখন রাইবােসােমে পৌঁছে তখন প্রােটিন সংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যায় । এরপর mRNA রাইবােসােম থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং প্রােটিন তৈরি সম্পন্ন হয়।

(ঘ) ট্রান্সলেশন পরবর্তী প্রক্রিয়াজাতকরণ

তৈরিকৃত এ পলিপেপটাইড শৃঙ্খলটি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে জীবদেহের উপযােগী প্রােটিনে রূপান্তরিত হয়। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, mRNA দ্বারা নির্ধারিত হয় প্রােটিন অণুর অ্যামাইনাে অ্যাসিডের সংখ্যা ও অণুক্রম। আর DNA অণুর একটি অংশের হুবহু প্রতিচ্ছবিই হচ্ছে mRNA।

অর্থাৎ প্রােটিন অণুর অ্যামাইনাে অ্যাসিডের অণুক্রম ও সংখ্যা DNA দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।

Leave a Comment