জিন
জিন ক্রোমােসােমস্থ DNA-এর অংশ যা বংশগতির আণবিক একক হিসেবে কাজ করে।
অন্যভাবে বলা যায়, জিন হলাে ক্রোমােসােমের সুনির্দিষ্ট স্থানে (লােকাসে) অবস্থিত DNA অণুর সুনির্দিষ্ট সিকুয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যকর সংকেত ধারণ করে এবং প্রােটিন হিসেবে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
জিন প্রকৃতপক্ষে জীবেরকোষ গঠন ও নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় তথ্য ধারণ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মে এ সমস্ত তথ্য স্থানান্তর করে। প্রত্যেকটি জীবেরপ্রতিটি ক্রোমােসােমে অনেকগুলাে জিন থাকে যারা ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
এর মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্যতাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান (যেমন- মানুষের চোখের রং, ফুলের রং ইত্যাদি), কিছু বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান নয় (যেমন- রক্তের গ্রুপ), আবার কিছু বৈশিষ্ট্য লুক্কায়িত (যেমন- ভবিষ্যতে কোন রােগের সম্ভাবনা)।
জিনের বৈশিষ্ট্য
১। জিন DNA দ্বারা গঠিত (ব্যতিক্রম- RNAভাইরাস)।
২। ক্রোমােসােমে প্রতিটি জিনের সুনির্দিষ্ট স্থান থাকে যাকে ঐ বিশেষ জিনের লােকাস বলে।
৩। একটি ক্রোমােসােমে অসংখ্য জিন থাকে এবং ক্রোমােসােমে এদের সজ্জাক্রম সুনির্দিষ্ট।
৪। জিন বংশগতিয় উপাদান অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মে তথ্য স্থানান্তর করে।
৫। আকৃতি ও প্রকৃতি অপরিবর্তিত রেখে জিনের আত্মােৎপাদনের ক্ষমতা আছে (ডিএনএ অনুলিপনের সময়)।
৬। মিউটেশনের ক্ষেত্রে জিনের উপাদানসমূহ পুনঃবিন্যস্ত হয়ে নতুন জিন গঠিত হয়।
জিনের কাজ
জীবদেহে জিনের ভূমিকা অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলাে-
১। জিন জীবের যাবতীয় বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা ফিনােটাইপ প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২। বংশগতির একক হিসেবে জীবদেহের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলাে জীবের এক জনু থেকে পরবর্তী জনুতে সঞ্চালিত হয়।
৩। জিন জীবের সাংগঠনিক এবং বিপাকীয় বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রােটিন, এনজাইম অথবা হরমােন সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
৪। জিন নির্দিষ্ট প্রজাতির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণকে সুনিশ্চিত করে।
৫। জিনসমূহ DNA থেকে mRNA ট্রান্সক্রিপশনকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রােটিন সংশ্লেষণের হারকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
জেনেটিক কোড
কোড হলাে গােপন বার্তা বা গােপন সংকেত। আমরা সকলে জানি যে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য এক বংশধর থেকে পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয়।
এক ধরনের কোড তথা গােপন সংকেতের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যের এ স্থানান্তর ঘটে। বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী এ কোডকে বলা হয় জেনেটিক কোড।
DNA তে এ কোড অবস্থান করে। DNA এর নিউক্ৰিয়ােটাইড এ চার ধরনের নাইট্রোজেনাস বেস থাকে। যথা- অ্যাডিনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন(C) ও থাইমিন (T)। DNA অণুতে পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি বেস মিলিতভাবে একটি জেনেটিক কোড গঠন করে।
প্রতিটি কোড ২০ প্রকার অ্যামাইনাে অ্যাসিডের যে কোনাে একটিকে নির্দেশ করে। mRNA সৃষ্টির মাধ্যমে ডিএনএ অণু এ কোডে তথ্য সাইটোপ্লাজমে প্রেরণ করে এবং সাইটোপ্লাজমে কোডের তথ্য অনুযায়ী এনজাইমসহ অন্যান্য প্রােটিন সংশ্লেষিত হয়।
সংশ্লেষিত প্রােটিনের মাধ্যমেই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশিত হয়। কাজেই দেখা যায়, জেনেটিক কোড হলাে নিউকিদ্বয়েটাইড এর অনুক্রম ও অ্যামাইনাে অ্যাসিডের অনুক্রমের মধ্যে যােগাযােগের পদ্ধতি।
একে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়- ডিএনএ অণুতে পর্যায়ক্রমিকভাবে সজ্জিত প্রতি তিনটি নিউক্লিয়ােটাইড এর মধ্যে একটি গােপন কোড নিহিত থাকে।
ডিএনএ অণু থেকে যখন এমআরএনএ ট্রান্সক্রাইব হয় তখন এ গােপন সংকেত এমআরএনএ অণুতে চলে আসে। ডিএনএ এর তিনটি নিউক্লিয়ােটাইডের বিপরীতে যে তিনটি কমপ্লিমেন্টারি নিউক্লিয়ােটাইড এমআরএনএ অণুতে সজ্জিত হয়, এ তিনটিকে একত্রে বলা হয় ট্রিপলেট।এমআরএনএ অণুর এ ট্রিপলেটকে বলা হয় কোডন।
প্রতিটি ট্রিপলেট একটি সুনির্দিষ্ট অ্যামাইনাে অ্যাসিডকে নির্দেশ করে। এ নির্দেশিত অ্যামাইনাে অ্যাসিড টিআরএনএ এর মাধ্যমে পলিপেপটাইড চেইন এ সংযুক্ত হয়ে প্রােটিন তৈরিতে অংশ নেয়।
টিআরএনএতে তিনটি নিউকিদ্বয়ােটাইডের যে ট্রিপলেট এমআরএনএ এর সম্পূরক ট্রিপলেটের (কোডনের সাথে) সাথে সংযুক্ত হতে পারে তাকে অ্যান্টিকোডন বলা হয়।
কোডনগুলাে আরএনএ গঠনকারী চারটি বেস এর প্রতিনিধিত্বকারী অক্ষরের মাধ্যমে (অ্যাডিনিন= A, গুয়ানিন= G, সাইটোসিন=C ও ইউরাসিল = U) প্রকাশ করা হয়। এ চারটি বেস লেটার (A, U, C, G)। বিভিন্ন কম্বিনেশনে ৬৪টি কোডন তৈরি করে। এর মধ্যে তিনটি (UAA, UAG, UGA) কোডন কোন অ্যামাইনাে-অ্যাসিডকে নির্দেশ করে না, বরং ট্রান্সলেশন বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করে।
তাই এই কোডন তিনটিকে সমাপনি কোডন বলা হয়। বাকি ৬১টি কোডন এর প্রতিটি কোন না কোন অ্যামাইনাে-অ্যাসিডকে নির্দেশ করে। এর মধ্যে AUG অ্যামাইনাে অ্যাসিড মেথিওনিন নির্দেশ করে যার মাধ্যমে ট্রান্সলেশন আরম্ভ হয়ে থাকে। তাই AUG কে প্রারম্ভিক কোডন (Initiation codon)।
জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্যাবলি
১। কোডনগুলাে ট্রিপলেট
২। একাধিক কোডন একটি অ্যামাইনাে অ্যাসিডকে কোড করে (যেমন- লিউসিন)।
৩। একটি কোডন কখনও একাধিক অ্যামাইনাে অ্যাসিডকে কোড করে না।
৪। কোডন তৈরিতে নিউক্লিয়ােটাইড কখনও ওভারলেপ করে না বরং ক্রমসজ্জা অনুসরণ করে।
৫। কোডনসমূহ সার্বজনীন অর্থাৎ বিশ্বের সকল প্রজাতির জন্য সমানভাবে প্রযােজ্য এবং আদিকাল থেকে শত বিবর্তন ধারা অতিক্রম করে এখনও একই রকম আছে।