কোষ ঝিল্লী/কোষ পর্দা।

কোষ ঝিল্লী/কোষ পর্দা (Plasma membrane)

কোষ প্রাচীরের নিচে সমস্ত প্রােটোপ্লাজমকে ঘিরে যে স্থিতিস্থাপক ও অর্ধভেদ্য সজীব পর্দা থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন, সেল মেমব্রেন, সাইটোমেমব্রেন বা কোষ ঝিলী বলে।

মেমব্রেনটি স্থানে স্থানে ভাঁজবিশিষ্ট হতে পারে। প্রতিটি ভাঁজকে মাইক্রোভিলাস (বহুবচনে মাইক্রোভিলাই) বলে। কোষের ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকা মাইক্রোভিলাসকে বলা হয় পিনােসাইটিক ফোস্কা।

কোষ ঝিল্লীর গঠন

কোষ ঝিল্লী প্রধানত লিপিড ও প্রােটিন দিয়ে তৈরি। এর গঠন বিন্যাস সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মডেল প্রস্তাব করেছেন তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে লিপিড-এর অণুগুলাে দুটি স্তরে সজ্জিত হয়ে ঝিল্লী এর কাঠামাে গঠন করে এবং দুস্তর লিপিড কাঠামাের মধ্যে প্রােটিন অণুগুলাে অবস্থান করে।

বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের দেয়া মডেলগুলাে (Qua Danielli- Daveson Model, Fluid Mosaic Model, Unit- Membrane Model 1 Benson’s Model উল্লেখযােগ্য। এসমস্ত মডেলগুলাের মধ্যে Fluid- Mosaic Model টি সর্বাধিক গ্রহণযােগ্য।

এখানে সংক্ষেপে Fluid- Mosaic Model এর বর্ণনা দেয়া হলাে।

ফুইড-মােজাইক মডেল

কোষ ঝিল্লীর গঠন সম্পর্কে ১৯৭২ সনে বিজ্ঞানী এস. জে. সিঙ্গার (S.J.Singer) এবং জি.এল.নিকলসন (G.L. Nicolson) এর প্রস্তাবিত ফ্লুইড মােজাইক মডেলটি বর্তমানে সর্বাধিক গ্রহণযােগ্য।

এ মডেল অনুযায়ী কোষ ঝিল্লীটি হচ্ছে ফসফোলিপিড ও প্রােটিন এর মােজাইক এবং এর উপাদানগুলাে হলাে-

(ক) ফসফোলিপিড বাইলেয়ার

এটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত এবং এর মধ্যে প্রােটিন অণুগুলাে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। ফসফোলিপিড স্তরের বাইরের দিকে পােলার প্রান্তে একটি ফসফেট মাথা এবং ভেতরের দিকে নন পােলার প্রান্তে দু’টি ফ্যাটি অ্যাসিড লেজ থাকে। দু’স্তরের ফসফোলিপিডের লেজগুলাে পানি বিদ্বেষী এবং পরস্পর মুখােমুখি অবস্থান করে কিন্তু মাথাগুলাে পানিগ্রাহী এবং এরা দু’সারিতে ঝিল্লীর ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করে।

(খ) মেমব্রেন প্রােটিন-

কোষ ঝিল্লীতে তিন ধরনের প্রােটিন পাওয়া যায়। এগুলাে হলাে-

i. লিপিড সম্পৃক্ত প্রােটিন-এগুলাে লিপিড কোর-এ সম্পৃক্ত থাকে।

।ii. পেরিফেরাল প্রােটিন-ফসফোলিপিড আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণ প্রবিষ্ট থাকে। এ প্রােটিন অণুগুলাে আংশিকভাবে পানিগ্রাহী এবং আংশিক পানি বিদ্বেষী। ফলে পানিগ্রাহী প্রান্তটি কোষ ঝিল্লী বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে। এবং পানি বিদ্বেষী অংশটি লিপিড স্তরের মধ্যে ডুবে থাকে।

iii. ইনটিগ্রাল প্রােটিন-ফসফোলিপিড বাইলেয়ারের দুস্তর জুড়েই থাকে।

(গ) অন্যান্য উপাদান

অনেক ফসফোলিপিড অণুর সাথে ক্ষুদ্র কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল লেগে থাকে, একে গ্লাইকোলিপিড বলে। অধিকাংশ প্রােটিন অণুর সাথে ক্ষুদ্র কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল লেগে থাকে। একে গ্লাইকোপ্রােটিন নামে অভিহিত করা হয়। এদের মিলিতভাবে গ্লাইকোক্যালিক্স বলে।

এছাড়াও ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে কোলেস্টেরল অণু থাকে। ফসফোলিপিড অণুগুলাে সর্বদাই কম্পমান, সচল, স্থান পরিবর্তনে সক্ষম এবং পরস্পরের সাথে ঠোকাঠুকি করে লাফিয়ে উঠে বলে একে তরল পদার্থ বা Fluid’ এর ন্যায় মনে হয়।

অন্যদিকে প্রােটিন অণুগুলাে এর মধ্যে অবস্থান করে বলে উপর থেকে দেখলে একে ফ্লোরের মােজাইকের ন্যায় মনে হয়। এ কারণেই এ মডেলকে ‘ফুইড মােজাইক মডেল নামকরণ করা হয়েছে।

রাসায়নিক গঠন

রাসায়নিকভাবে কোষ ঝিল্লী ৬০-৮০% প্রােটিন, ২০-৪০% লিপিড, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট এবং পানি ও লবণ দিয়ে গঠিত।

কোষ ঝিল্লী এর কাজ

১। কোষকে নির্দিষ্ট আকার দান করে।

২। কোষ এর আভ্যন্তরীণ সকল বস্তুকে বেষ্টন করে রাখে ।

৩। বাইরের সকল প্রতিকূল অবস্থা থেকে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে।

৪। কোষের বাইরে এবং ভেতরে পদার্থের স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে (ভেদ্য, অভেদ্য বা অর্ধভেদ্য হিসেবে)।

৫। বিভিন্ন বৃহদাণু সংশ্লেষ করতে পারে।

৬। বিভিন্ন রকম কোষ অঙ্গাণু (যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ইত্যাদি) সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

Leave a Comment