- সহজাত আচরণ
- ট্যাক্সিস
- ১। ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis)
- ২। থার্মোর্ট্যাক্সিস (Thermotaxis)
- ৩। কেমােট্যাক্সিস (Chemotaxis)
- ৪। থিগমােট্যাক্সিস (Thigmotaxis)
- ৫। হাইড্রোট্যাক্সিস (Hydrotaxis)
- ৬। অ্যানিমােট্যাক্সিস (Anemotaxis)
- ৭। রিওট্যাক্সিস (Rheotaxis)
- ৮। জিওট্যাক্সিস (Geotaxis )
- ৯। গ্যালভানােট্যাক্সিস (Galvanotaxis)
- ১০। ফনােট্যাক্সিস (Phonotaxis)
সহজাত আচরণ
একটি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রাণী কোন রকম শিক্ষা বা পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই জৈবিক প্রয়ােজন মেটাতে বা আত্মরক্ষার তাগিদে বংশ পরম্পরায় একইভাবে যেসব জন্মগত অপরিবর্তনীয় আচরণ প্রদর্শন করে তাকে সহজাত আচরণ বলে।
সহজাত আচরণের বৈশিষ্ট্য
১। সহজাত আচরণ বংশগত এবং জিন নিয়ন্ত্রিত। তাই প্রতিটি প্রজাতির জন্য এ আচরণ সুনির্দিষ্ট।
২। সহজাত আচরণ শেখার মাধ্যমে বা পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না।
৩। সহজাত আচরণ জন্মগত হলেও, প্রতিটি সহজাত আচরণ জন্মের সময় থেকে আত্মপ্রকাশ করে না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে উপযুক্ত সময়ে তাদের বিকাশ ঘটে। যেমন- শিশুর স্তনপানের প্রবৃত্তি জন্মের সময় থেকে প্রকাশিত হলেও যুগলবন্দী বা মৈথুন প্রবৃত্তি জন্মের পরপরই আত্মপ্রকাশ করে না।
৪। সহজাত আচরণ একটি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই দেখা যায় এবং তা বংশ পরম্পরায় একইভাবে আত্মপ্রকাশ করে। বাবুই পাখি অতীতে যেভাবে বাসা তৈরি করেছে, আজও তা সেভাবেই বাসা বেঁধে চলেছে।
৫। সহজাত আচরণ প্রাণীর কোন না কোন উদ্দেশ্যের সাধন করে, যদিও উদ্দেশ্যর ফলাফল সম্পর্কে প্রাণীর কোন পূর্ব ধারণা থাকে না।
৬। সহজাত আচরণ প্রাণীর জৈবিক প্রয়ােজন মিটায় এবং আত্মরক্ষা, বংশ রক্ষা বা অন্যান্য কাজে সহায়তা দান করে।
৭। সহজাত আচরণের একটি নির্দিষ্ট পরম্পরা আছে। যেমন, ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্রের লােনা পানি থেকে নদীর স্বাদু পানিতে চলে আসে। আবার ডিম হতে পােনা হওয়ার পর এরা পুনরায় সমুদ্রে যাত্রা করে।
সহজাত আচরণের উদাহরণঃ ট্যাক্সিস, প্রতিবর্তি ক্রিয়া, স্বভাবজাত আচরণ
ট্যাক্সিস
উদ্দীপকের নির্দেশ মােতাবেক যে ধরনের ওরিয়েন্টেশন ঘটে তাকে ট্যাক্সিস বলে। অর্থাৎ উদ্দীপকের উৎসের সাথে সম্পর্ক রেখে দেহ অক্ষের অবস্থানগত পরিবর্তনই ট্যাক্সিস।
এটি অন্যতম সহজাত আচরণ এবং অভিযােজনযােগ্য। ট্যাক্সিস এর প্রধান শর্ত হলাে প্রাণীর স্থান পরিবর্তন। অন্য কথায়, কোন বাহ্যিক উদ্দীপক দ্বারা প্রাণীর চলাচলের গতিকে প্রভাবিত বা ত্বরান্বিত করাই হলাে ট্যাক্সিস। Herter (1927), Cellyot (1936), Tinbergen (1951) প্রমুখ প্রাণিবিদ প্রাণীর ট্যাক্সিস নিয়ে গবেষণা করেছেন।
ট্যাক্সিস এর প্রকারভেদ (Types of taxis)
ট্যাক্সিস ধনাত্মক বা ঋনাত্মক হতে পারে। কোন উদ্দীপকের অভিমুখে গমনকে ধনাত্মক এবং বিপরীতমুখী গমনকে ঋণাত্মক ট্যাক্সিস বলে।
উদ্দীপনার উৎসের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীগণ ট্যাক্সিসকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করেছেন-
১। ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis)
আলােক উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে ফটোট্যাক্সিস বলে। আলাের উৎসের প্রতি আকর্ষণকে ধনাত্মক এবং বিকর্ষণকে ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিস বলে। যেমন- আলাের প্রতি উইপােকা ধনাত্মক এবং আরশােলা ঋনাত্মক ফটোট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।
২। থার্মোর্ট্যাক্সিস (Thermotaxis)
তাপ উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর যে স্থানান্তর ঘটে তাকে থার্মোট্যাক্সিস বলে। গ্রীষ্মকালে ছারপােকার আক্রমণ ধনাত্মক ও ব্যাঙের শীতন্দ্রিা ঋনাত্মক থার্মোর্ট্যাক্সিস।
৩। কেমােট্যাক্সিস (Chemotaxis)
রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর গমনাগমনকে কেমােট্যাক্সিস বলে। যেমন- চিনির প্রতি পিপড়ার আকর্ষণ ধনাত্মক কেমােট্যাক্সিস।
৪। থিগমােট্যাক্সিস (Thigmotaxis)
যখন প্রাণী তার চলার পথে স্পর্শ ইন্দ্রিয় দ্বারা স্থানান্তরে অনুপ্রাণিত হয় তখন তাকে থিগমােট্যাক্সিস বলে। এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।
৫। হাইড্রোট্যাক্সিস (Hydrotaxis)
পানি যখন প্রাণীর চলাচলকে প্রভাবিত করে তখন তাকে হাইড্রোট্যাক্সিস বলে। কেঁচোর ভেজা মাটিতে বসবাস ধনাত্মক হাইড্রোট্যাক্সিস ।
৬। অ্যানিমােট্যাক্সিস (Anemotaxis)
বায়ুপ্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রাণীর চলাচলকে অ্যানিমােট্যাক্সিস বলে। বায়ুপ্রবাহের অনুকূলে পাখির উড্ডয়নকে ধনাত্মক এবং প্রতিকূলে উড্ডয়নকে ঋণাত্মক অ্যানিমােট্যাক্সিস বলে।
৭। রিওট্যাক্সিস (Rheotaxis)
পানির স্রোতের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে রিওট্যাক্সিস বলে। যেমন- কার্প জাতীয় মাছ প্রজননের সময় পানিস্রোতের বিপরীতে চলে ঋনাত্মক রিওট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।
৮। জিওট্যাক্সিস (Geotaxis )
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রাণীর চলাচলকে জিওট্যাক্সিস বলে। খাদ্যের সন্ধানে বিভিন্ন পােকার গাছ বেয়ে উপরের দিকে উঠা এবং এদের পিউপার নিচের দিকে নামা যথাক্রমে ঋণাত্মক ও ধনাত্মক জিওট্যাক্সিস।
৯। গ্যালভানােট্যাক্সিস (Galvanotaxis)
বিদ্যুৎপ্রবাহ দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে গ্যালভানােট্যাক্সিস বলে। যেমন- চিংড়িধারী কোন অ্যাকুরিয়ামে দূর্বল তড়িৎপ্রবাহ চালানাে হলে সকল চিংড়ি অ্যাকুরিয়ামের ধনাত্মক (অ্যানােড)প্রান্তের দিকে ছুটতে থাকে।
১০। ফনােট্যাক্সিস (Phonotaxis)
শব্দের প্রতি সাড়া প্রদান করে প্রাণীর চলাচলকে ফনােট্যাক্সিস বলে। পানিতে শব্দ সৃষ্টি করলে কিছু মাছ ধনাত্মক এবং কিছু মাছ ঋণাত্মক ফনােট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।
উদ্দীপক এবং গ্রাহক অঙ্গের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে ট্যাক্সিকে নিম্নলিখিতভাবে বিভক্ত করা হয়েছে-
(ক) ট্রোপােট্যাক্সিস
দুই বা ততােধিক গ্রাহক অঙ্গ দ্বারা কোন একটি উদ্দীপকের উদ্দীপনা যুগপৎ গৃহীত হলে একই সময়ে সংঘটিত প্রতিক্রিয়া তুলনা করে যে ভারসাম্য মূলক সঞ্চালন ঘটে তাকে ট্রোপােট্যাক্সিস বলে। খাদ্যের ঘ্রাণবাহী পানি স্রোতের প্রতি Daugesia (Planaria) পজেটিভ ট্রোপােট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।
(খ) ক্লিনােট্যাক্সিস
যখন পরপর কয়েকটি উদ্দিপকের তীব্রতা তুলনা করে ওরিয়েন্টেশনের ধারা নির্ধারিত হয় তখন তাকে ক্লিনােট্যাক্সিস বলে। শুয়ােপােকার মাথা ক্রমান্বয়ে ডান ও বাম দিকে ঘুরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
(গ) টেলােট্যাক্সিস
উদ্দীপকের উৎস দুটি হলে এবং এরা একই পদ্ধতিতে ক্রিয়াশীল থাকলে একটি মাত্র উদ্দীপকের দিকে প্রাণীর ওরিয়েন্টেশন ঘটবে। সন্ন্যাসী কাঁকড়া (Hermit crab) উদ্দীপকের দুটি উৎসের যেকোন একটি অভিমুখে ওরিয়েন্টশন ঘটায়।
(ঘ) মেনােট্যাক্সিস
উদ্দীপকের ক্রিয়ার সাথে নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রাণীর সাড়া প্রদান। পতঙ্গের আলােক দিক দর্শন প্রতিক্রিয়া এরূপ ওরিয়েন্টেশনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
(ঙ) নেমােট্যাক্সিস
স্মৃতির উপর ভিত্তি করে যে ওরিয়েন্টেশন ঘটে তাকে নেমােট্যাক্সিস বলে। জলজর স্মৃতি শক্তি বলে নিত্য একই পথ অনুসরণ করে বাসায় প্রত্যাবর্তন।