রােগজীবাণু কিংবা পরজীবী আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য মানবদেহে সাধারণভাবে তিন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়।
১। প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর
২। দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তর
২। তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর
নিম্নে প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর বর্ননা করা হলো-
প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর
এ প্রতিরক্ষার প্রথম স্থরে নিম্নলিখিত উপাদানগুলাে জীবাণু প্রতিরােধ করে থাকে-
১। ত্বক (Skin)
ত্বক দেহে অণুজীব প্রবেশের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ত্বকীয় গ্রন্থি নিঃসৃত ঘাম ও তৈল ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষস্বরূপ। ত্বকে বিদ্যমান মিথােজীবী অণুজীব সংক্রামক অণুজীব প্রতিরােধ করে।
২। সিলিয়া ও মিউকাস (Cilia and Mucus)
শ্বাসনালিতে বিদ্যমান সিলিয়া ও মিউকাস অবিরাম ধূলিকণা ও অণুজীবদেরহাঁচি (sneezing) ও কাশির (Coughing) মাধ্যমে বের করে দেয়।
৩। এসিড (Acid)
পাকস্থলীতে বিদ্যমান হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) খাদ্যের সঙ্গে আগত বিভিন্ন অণুজীব ধ্বংস করে। যােনিতে বিদ্যমান মিথােজীবী ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে অণুজীবের সংক্রমণ রােধ করে।
৪। লাইসােজাইম এনজাইম (LysoZyme enzyme)
লালা, অশ্রু, মূত্র ও ঘামে বিদ্যমান লাইসােজাইম এনজাইম দেহে আগত অধিকাংশ ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করে।
৫। রক্ত জমাট (Blood clotting)
ক্ষতস্থানে দ্রুত রক্ত তঞ্চন ঘটে দেহে অণুজীব প্রবেশ রােধ করে।
প্রতিরক্ষায় ত্বকের ভূমিকা
ত্বক প্রথম স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলে। ত্বক দেহকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং প্রভাবে সৃষ্ট রােগ (ক্যান্সার) হতে দেহকে রক্ষা করে।
ত্বকের এপিডার্মিসের কোষে মেলালিন (melanine) জাতীয় পদার্থসৃষ্টি হয় যা অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে। ত্বক দেহের বাইরের স্তরে দৃঢ় ও কেরাটিনাইজড (keratinized) আবরণী তৈরি করে, যা দেহের সকল বাহ্যিক অংশকে আচ্ছাদিত করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি ফলপ্রসূ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
দেহত্বক ছিড়ে গেলে বা কেটে গেলে ত্বকে অবস্থিত হিস্টিওসাইট (ম্যাক্রোফেজ) জীবাণু ধ্বংস করে দেহকেপ্রতিরক্ষা দান করে। ঘাম ও তৈল গ্রন্থির নিঃসরণ ত্বকের উপরিভাগের pH-কে অম্লীয় (pH= 3-5) করে তােলে, ফলে অণুজীবসমূহ বেশি সময় ত্বকে বেঁচে থাকতে পারে না।
কিছু সংখ্যক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ত্বকে অবস্থানকালে এসিড ও বিপাকীয় বর্জ্য নিঃসরণ করে, যা অণুজীরে সংখ্যাবৃদ্ধিকে বাধা দেয়। ঘাম নিঃসৃত লবণ ও ফ্যাটি এসিডে অবস্থিত লাইসােজাইম (lysoZyme) ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরকে ধ্বংস করে।
খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাকনালির এসিড ও এনজাইমের ভূমিকা
লালারসের লাইসােজাইম এনজাইম খাদ্য-পানীয়তে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। লালারসের অবিরাম ক্ষরণে মুখের অভ্যন্তরে বা দাঁতে খাদ্যকণা সঞ্চিত হতেপারে না, ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।আর যেসব ব্যাকটেরিয়া লালারস দ্বারা ধ্বংস হয় না তারা পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত HCl এসিড দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পাকস্থলীরসে অতি অল্পমাত্রায় বিদ্যমান লাইসােজাইমও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে থাকে।