কোষ বিভাজন
বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি কোষের একটি স্বাভাবিক এবং অতি গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এককোষী জীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ঈষ্ট, Navicula প্রভৃতি বার বার বিভাজনের মাধ্যমে একটি থেকে অসংখ্য এককোষী জীবে পরিণত হয়। বিশালদেহী একটি বটগাছের সূচনাও কিন্তু একটি মাত্র কোষ জাইগােট হতে। এককোষী নিষিক্ত ডিম্বক হতে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি পরিণত মানুষের সৃষ্টি হয়। কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশ বৃদ্ধি ঘটে।সংঙ্গাঃযে প্রক্রিয়ায় জীবের সংখ্যাবৃদ্ধি, দৈহিক বৃদ্ধি ও জননের উদ্দেশ্যে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলা হয়।যে কোষটি বিভাজিত হয় তাকে মাতৃকোষ এবং বিভাজনের ফলে যে নতুন কোষ উৎপন্ন হয়, তাকে অপত্য কোষ বলা হয়।
আবিষ্কার
Walter Fleinning ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সামুদ্রিক সালামান্ডার কোষে প্রথম কোষ বিভাজন প্রত্যক্ষ করেন।সাধারণত কোষের প্রধান দুটি অংশ থাকে। যেমন- নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম। কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম উভয়েই বিভাজিত হয়।
ক্যারিওকাইনেসিস
কোষ বিভাজনে কোষের নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস।
সাইটোকাইনেসিস
কোষ বিভাজনে কোষের সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ
জীব জগতে তিন প্রকারের কোষ বিভাজন দেখা যায়। যথা-
(ক) অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন,
(খ) মাইটোসিস বা সমীকরণিক কোষ বিভাজন এবং
(গ) মায়ােসিস বা হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন।
(ক) অ্যামাইটোসিস
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপাজম উভয়েই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে, তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলা হয়।
প্রক্রিয়াঃ এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসটি সরাসরি দুটি অংশে বিভক্ত হয়। নিউক্লিয়াসটি প্রথমে লম্বা হয় এবং পরে মধ্যখানে ভাগ হয়ে দুটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিউক্লিয়াস বিভাজনের সাথে সাথে কোষের কোষ প্রাচীরসহ সাইটোপাজম মাঝ বরাবর সঙ্কুচিত হতে থাকে। এক সময় বিচ্ছিন্ন হয়। ফলে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়। পরে অপত্য কোষ দুটি বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের অনুরূপ আকৃতি লাভ করে।
উদাহরণ: ব্যাকটেরিয়া,কতিপয় ঈস্ট,অ্যামিবা প্রভৃতি এককোষী জীবে ও বিশেষ আদিকোষী জীবে এ প্রকার কোষ বিভাজন ঘটে।
(খ) মাইটোসিস
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি প্রকৃতকোষের নিউক্লিয়াস এবং ক্রোমােসােম উভয়ই একবার করে বিভক্ত হয় তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলা হয়। প্রাণী ও উদ্ভিদের বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন দৈহিক কোষে মাইটোসিস কোষ বিভাজন ঘটে। জনন মাতৃকোষে মাইটোসিস ঘটে না।
(গ) মায়ােসিস
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ক্রোমােসােম মাত্র একবার এবং নিউক্লিয়াস পরপর দু’বার বিভক্ত হয়, এবং বিভাজনের ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমােসােম সংখ্যা (n) মাতৃকোষের ক্রোমােসােম সংখ্যার (2n) অর্ধেক হয়, তাকে মায়ােসিস কোষ বিভাজন বলা হয়। মায়ােসিস সর্বদা জনন মাতৃকোষে ঘটে। দৈহিক কোষে মায়ােসিস কখনই ঘটে না।
কোষ চক্র
সংজ্ঞা
যে চক্রাকার প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ একাধিক অপত্য কোষ উৎপন্ন করে তাকে কোষ চক্র বলে।কোষের প্রস্তুতি পর্যায় এবং বিভাজন পর্যায়কে সমষ্টিগতভাবে কোষ চক্র বলা হয়।
একটি কোষ সৃষ্টি, এর বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বিভাজন এ তিনটি কাজ যে চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাকে বলা হয় কোষ চক্র।কোষের বিভাজনরত অবস্থা ও প্রস্তুতি পর্যায়কে একসাথে বিবেচনা করে হাওয়ার্ড ও পেক্ক ১৯৫৩ সালে একটি কোষ চক্র পেশ করেন। এতে দেখা যায়, সমগ্র কোষ চক্রের ৯০-৯৫ ভাগ সময় প্রস্তুতিতে এবং মাত্র ৫-১০ ভাগ সময় বিভাজনে ব্যয় হয়।
কোষ চক্রের ধাপ
কোষ চক্রের প্রধান ধাপ ২টি যথা- ১) ইন্টারফেজ দশা ২) বিভাজন দশা
ইন্টারফেজ দশা
কোষ বিভাজন একটি পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়াটি শুরুর আগেই নিউক্লিয়াসকে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ বা প্রস্তুতি পর্ব বলা হয়।অর্থাৎ একটি কোষ পরপর দুবার বিভক্ত হবার মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয় ইন্টারফেজ। ইন্টারফেজ পর্যায়ে পরবর্তী বিভাজনের সকল প্রস্তুতি চলতে থাকে।
ইন্টারফেজ দশার ধাপ
ইন্টারফেজ বা প্রস্তুতি পর্যায়কে আবার তিনটি উপপর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(ক) বিরাম ১ (G-1), (খ) ডিএনএ প্রতিলিপন (Synthesis phase) এবং (গ) বিরাম ২ (G-2)।
(ক) বিরাম ১ (G-1) : বিরাম ১ উপপর্যায়ে সাইক্লিন নামক প্রােটিন, অন্যান্য প্রােটিন এবং RNA সংশ্লেষিত হয়। এতে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ সময় ব্যয় হয়।
(খ) ডিএনএ অনুলিপন : ডিএনএ প্রতিলিপন উপপর্যায়ে- কোষস্থ সকল ক্রোমােসােমের ডিএনএ-এর প্রতিরূপ সৃষ্টি হয়। এখানে শতকরা ৩০-৫০ ভাগ সময় ব্যয় হয়।
(গ) বিরাম ২ (G-2) : বিরাম ২ উপপর্যায়ে কোষ বিভাজনের অন্যান্য প্রয়ােজনীয় উপাদান প্রস্তুত হয়। এতে শতকরা ১০-২০ ভাগ সময় ব্যয় হয়।