ইমিউনাইজেশন বা অনাক্রম্যতাসাধন পদ্ধতি (Methed of Immunization)
আগেই বলা হয়েছে অনাক্রম্যতা সাধনের ক্ষেত্রে শরীরে কোনাে রােগের জীবাণু প্রতিরােধের জন্য অ্যান্টিবডি প্রস্তুতির ব্যবস্থা করা হয়।
তবে মানবদেহে দুটি পদ্ধতিতে ইমিউনিটি অর্জিত হতে পারে, যথা- সক্রিয়ভাবে ও পরােক্ষভাবে।
সক্রিয় ইমিউনিটি (Active immunity)
মানুষের একটি সহজাত ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বলে, দেহে রােগের জীবাণু প্রবেশের পর মানুষের রক্তের লিম্ফোসাইট সরাসরি অ্যান্টিবডি তৈরি বা কোষীয় সক্রিয় জীবাণু ধ্বংস করতে পারে।
পরােক্ষ অনাক্রম্যতার (passive immunity)
ক্ষেত্রে মানুষের দেহে বাইরে থেকে অ্যান্টিবডির প্রবেশ ঘটিয়ে রােগের জীবাণু নষ্ট করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মাতৃগর্ভে শিশু মায়ের রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি পেয়ে রােগ জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরােধ করতে পারে।
সুতরাং মাতৃগর্ভে শিশু অনাক্রম্যতার মাধ্যমে রােগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পায়।কৃত্রিমভাবে মানুষ যখন ইমিউনিটি আনার চেষ্টা করে তখন সুস্থ মানুষের দেহে নিষ্ক্রিয় কোনাে রােগ জীবাণুর প্রবেশ ঘটিয়ে সক্রিয় অনাক্রম্যতাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
এতে মানুষের রােগটি দেখা দেয় না (জীবাণু নিষ্ক্রিয় ধরনের বলে), উপরন্তু রােগ জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। তখন দেহে সক্রিয় কোনাে রােগ জীবাণু প্রবেশ করলেও তা অনায়াসে অ্যান্টিবডি উপস্থিতির জন্য বিনষ্ট হয় ও মানুষ রােগের হাত থেকে রক্ষা পায়।
নিষ্ক্রিয় জীবাণু দেহে প্রবেশ করিয়ে যে ইমিউনিটি জাগানাে হয় তাকে বলে ভ্যাকসিন বা (vacine) টিকা। আর এই পদ্ধতিকে বলা হয় ভ্যাকসিনেশন (vaccination) বা টিকাকরণ।
দেহের প্রতিরক্ষায় স্মৃতি কোষ বা মেমােরি কোষের ভূমিকা
কোনাে জীবাণুর বিরুদ্ধে একবার প্রতিরােধ গড়ে তােলার পর B-লিম্ফোসাইট এবং-T লিম্ফোসাইট উভয়েই স্মৃতিকোষ বা মেমােরি কোষ (memory cell) হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
এসব মেমােরি কোষ (মেমােরি B কোষ ও মেমােরি Tকোষ) শরীরকে একবার প্রতিহত করা জীবাণুকে চিনতে সাহায্য করে ফলে একই জীবাণু পুনরাক্রমণ ঘটলে অতি দ্রুততার সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে।
দেহে একই জীবাণু পুনরাক্রমণ ঘটলে মেমােরি T-কোষ অতিদ্রুত বিপুল সংখ্যক ও প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন ধরনের লিম্ফোসাইট সৃষ্টি করে অনাক্রম্যতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং জীবাণুকে সরাসরি আক্রমণ করে ধ্বংস করে।
এ কোষ স্বাভাবিক অবস্থায় কোনাে অ্যান্টিবডি ক্ষরণ করে না। B-লিম্ফোসাইটের ক্ষেত্রে মেমােরি কোষের ভূমিকা সবচেয়ে ভালােভাবে অনুধাবন করা যায়।
B-লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে শরীরে অনাক্রম্যতা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ এটি হিউমােরাল ইমিউনিটির সঙ্গে জড়িত। T-লিম্ফোসাইটের মতাে বহু রকমের B-লিম্ফোসাইট দেখা যায় এবং এদের মধ্যে প্রতিটি কোষই বিশেষ বিশেষ অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে সাড়া দিতে পারে।
B-লিম্ফোসাইট অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে এলে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং উপর্যুপরি বিভাজিত হয়ে একই রকমের অনেকগুলাে লিম্ফোসাইট তৈরি করে। উপজাত কোষগুলাের বেশিরভাগই প্লাজমা কোষে রূপান্তরিত হয় এবং অবশিষ্ট কোষগুলাে মেমােরি কোষে (memory cell) রূপান্তরিত হয়।
মেমােরি কোষ অল্প মাত্রায় অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করতে পারে। প্লাজমা কোষই অ্যান্টিবডির প্রধান উৎস। প্লাজমা কোষ প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করে। দেখা গেছে, একটি সক্রিয় প্লাজমা কোষ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০০০ অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করতে পারে।
মেমােরি কোষগুলাে রক্তের মধ্যে দীর্ঘদিন, এমনকি সারা জীবন ধরে থাকতে পারে। এই কোষের উপরিভাগ IgG অথবা IgA জাতীয় অ্যান্টিবডি থাকে। কখনাে অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে এলে তা দ্রুত সাড়া জাগাতে পারে। এই সাড়া জাগানাে প্রাথমিক অবস্থায় যেমন থাকে তা হতে অনেকগুণ বেশি হয়।
এ কারণে কেউ যদি একবার কোনাে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে পরবর্তীকালে ওই ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে সে খুব সহজেই রক্ষা পায়। এ কারণেই শিশু কালের কিছু রােগ যেমন- হাম, মাম্পস, চিকেন পক্স ইত্যাদি জীবনে একবারই হয়।
ভ্যাকসিনেশন এই নীতির ভিত্তিতেই উদ্ভব হয়েছে। মানবদেহের স্থায়ী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে, মাতৃগর্ভে ভ্রণকে সুরক্ষা প্রদান এবং শিশুকে জীবাণুর সংক্রমণ হতে রক্ষার ক্ষেত্রে মেমােরি কোষের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। শিশু মায়ের দেহ থেকে পরােক্ষভাবে মেমােরি কোষ পেয়ে থাকে।