প্রথম অধ্যায়ঃপ্রাণির বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস

প্রাণিজগতের শ্রেণীবিন্যাস

শ্রেণীবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী প্রাণিকূলকে গােষ্ঠীভুক্ত করার পদ্ধতিকে শ্রেণীবিন্যাস বলে।

(Classification is the ordering of animals into groups or sets on the basis of their relationships-Simpson, 1961) wiatua (Aristotle, 284-322 B. C) 928 PROTECTS (Theophrastus, 370-285B.C) সময় থেকে সর্বপ্রথম একটি রীতি অনুযায়ী জীব অধ্যয়নের সূচনা পরিলক্ষিত হয়।

পরবর্তীকালে প্রায় ২০০০ বছর পর্যন্ত প্রাণিজগতের শ্রেণীবিন্যাস প্রথার কোনাে লক্ষনীয় পরিবর্তন ঘটেনি।

শ্রেণীবিন্যাসের নিয়মবদ্ধ অধ্যয়ন জন রে (John Ray. 1624–1705) এবং ক্যারােলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus, 1707–1778)-এর আগে হয়নি।

লিনিয়াস প্রবর্তিত পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রজাতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত হয়, দ্বিপদ নামকরণ প্রথা প্রবর্তিত হয় এবং ট্যাক্সোনমিক বিন্যাস পদ্ধতির (Taxonomic Category) প্রস্তাবনা করা হয়।

দ্বিপদ নামকরণ প্রকৃতপক্ষে সুইডিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী কাস্পার বাউহিন (Kaspar Bauhin. 1560–1624) উদ্ভাবন করে এবং পরবর্তীতে লিনিয়াসের নামকরণ প্রথায় এর বহুল ব্যবহার এবং স্বীকৃতি লাভ করে।

ক্যারােলাস লিনিয়াস শ্রেণীবিন্যাসের জনক

বিজ্ঞানভিত্তিক ও সুসংবদ্ধ উপায়ে প্রাণিদের সর্বপ্রথম শ্রেণিবিন্যাস করেন সুইডিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী (Naturalist) ক্যারােলাস লিনিয়াস।

তার systema Naturae নামক পুস্তকের দশম সংস্করণে (1758) দ্বিপদ নামকরণের (Binomial Noumulature) পদ্ধতি সর্বপ্রথম তিনি প্রবর্তন ও সঙ্গতভাবে ব্যবহার করেন।

এ নিয়মাবলী এতই যুক্তিপূর্ণ যে প্রাণিবিজ্ঞানের দিগন্ত বহু বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও এর খুব বেশী পরিবর্তন হয়নি।

লিনিয়াসকে তাই শ্রেণীবিনাসের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়ােজনীয়তা

তত্ত্বীয় ও ফলিত উভয় জীববিজ্ঞানেই শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হলাে।

(ক) তাত্ত্বিক প্রয়ােজনীয়তা

(১) শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে কোনাে প্রাণিগােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি প্রাণী সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলে ঐ গােষ্ঠীর

অন্যান্য প্রাণী সম্বন্ধে ধারণা জন্মে।

(২) কম পরিশ্রম ও অল্প সময়ের মধ্যে প্রাণিজগতের অনেক সদস্য সম্পর্কে জানা ও শেখা যায়।

(৩) প্রাণিকূলের পারস্পরিক সম্পর্ক বা জাতিজনির বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

(৪) প্রাণিকূলের বিবর্তনিক ধারা নির্ণয়ে সাহায্য করে।

(৫) নতুন প্রজাতি সনাক্ত করতে শ্রেণীবিন্যাস অপরিহার্য।

(খ) ফলিত প্রয়ােজনীয়তা

(১) জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও বনের ক্ষতিকর প্রজাতি দমনের উদ্দেশ্যে শ্রেণীবিন্যাস নির্দিষ্ট প্রজাতির সঠিক

পরিচয় দান করে।

(২) অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রাণী বাছাই করা যায়।

(৩) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সাহায্য করে।

(৪) ভূতত্ত্বীয় ঘটনাবলীর নিখুত চিত্র তুলে ধরতে জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাসে সাহায্য করে।

(৫) কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতের পশুপাখি উদ্ভাবন সহজতর হয়।

প্রাণিজগতের ভিন্নতা (Animal Diversity)

পৃথিবীতে বহু প্রজাতির ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে বিভিন্ন পরিবেশে বাস করার জন্য এসব প্রাণী ভিন্ন ভিন্নভাবে অভিযােজিত হয়েছে।

এসব প্রাণীর কারও কারও মধ্যে বৈশিষ্ট্যের প্রচুর মিল রয়েছে। আবার কারও কারও মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার পার্থক্য দেখা যায় পৃথিবীর মাটি, বায়ু ও পানিতে বসবাসকারী সকল প্রাণীর মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত বা বাস্তুতন্ত্রগত বৈচিত্র্য দেখা যায় তাকে প্রাণিবৈচিত্র্য বলে।

প্রকৃতিতে তিন ধরনের বৈচিত্র দেখা যায় ।

ক. জিনগত বৈচিত্র্য Genetic diversity)

কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মধ্যে জিনের যেসব পরিবর্তন বা অপভেদ লক্ষ করা যায়, তাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।

এক্ষেত্রে প্রজাতিতে রেস (race), জাত (variety), ইত্যাদির সৃষ্টি হয় যেমন- বিশ্বের সকল মানুষ Hornto sapines প্রজাতিভুক্ত হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে * Negroid, Mongoloid, Coucasoid Eef CT273T

খ. প্রজাতি বৈচিত্র্য (Species diversity)

কোনাে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতিকে প্রজাতি বৈচিত্র বলে কখনােই দুটি প্রজাতির প্রাণী এক রকম হয় না।

একই গণভুক্ত প্রজাতির মধ্যেও ক্রোমােজোম সংখ্যা ও আঙ্গিক গঠনে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- বাঘ (Panthera tigris) ও Panthera leo সিংহ একই গণের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।

গ. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystern diversity)

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর সাথে জীবজগতের মিথস্ক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশীয় একক বা বায়ােম (biome) সৃষ্টি হয়।

যেমন- তুন্দ্রা বায়ােম, মরু বায়োম, বনভূমি বায়ােমতৃণভূমি বায়োম ইত্যাদি। প্রতিটি বায়ােমে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বৈচিত্র্যময়প্রার্থী রয়েছে।

এরূপ বিভিন্ন বায়ােমে বিদ্যমান প্রাণীর বৈচিত্র্যকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে। তুন্দ্রা বায়ােমের শ্বেত ভাল্লুক এবং বনভূমি বায়ােমেৱ ভাল্লুকের মধ্যে এ বৈচিত্র্য বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

Leave a Comment