প্রশ্ন-০ ॥ পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়ার কৌশল সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ আলোচনা কর।
উত্তর॥ পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনে পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়ার কৌশল : পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনের সবচেয়ে উপযোগী অংশ হলো পত্ররন্ধ্র। রক্ষীকোষদ্বয়ের পত্ররন্ধ্র সংলগ্ন প্রাচীর বেশ পুরু কিন্তু বহির্ভাগের অর্থাৎ বহিঃত্বক কোষ সংলগ্ন প্রাচীর বেশ পাতলা হয় এবং এদের মধ্যে একটি করে বড় নিউক্লিয়াস এবং কিছু ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। রক্ষীকোষদ্বয়ের স্ফীত অথবা শিথিল অবস্থা পত্ররন্ধ্রের খোলা বা বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন শারীরবিজ্ঞানীয় কারণে রক্ষীকোষে অন্তঃঅভিস্রবণ ও বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে থাকে। রক্ষীকোষদ্বয় পার্শ্বস্থ বহিঃত্বক কোষ হতে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে স্ফীত হয় এবং এর ফলে রন্ধ্রসংলগ্ন পার্শ্ব প্রাচীর পুরু হওয়ায় সেদিকে বেঁকে যায় এবং রন্ধ্র খুলে যায়। অপরপক্ষে বহিঃঅভিস্রবণের ফলে রক্ষীকোষদ্বয় স্ফীতি হালিয়ে শিথিল হয়ে পড়ে, ফলে রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই দেখা যায়, পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়া রক্ষীকোষদ্বয়ের গঠন ও স্ফীতির উপর নির্ভরশীল। আলো, তাপ, বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা প্রভৃতি কারণ রক্ষীকোষদ্বয়ের স্ফীতি ও শিথিল হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তার ব্যাপারে মতদ্বৈততা আছে। কি কি কারণে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয় বা খুলে যায় তার কিছু মতবাদ নিম্নে বর্ণিত হল।
(র) বিজ্ঞানী লয়েড মত প্রকাশ করেন যে, পত্ররন্ধ্রে রক্ষীকোষস্থ কোষরসের আভিস্রবণিক চাপের তারতম্যের জন্য পত্ররন্ধ্রের খোলা বা বন্ধ হওয়া নির্ভরশীল এবং এ তারতম্য কোষস্থ চিনি ও শ্বেতসারের অন্তঃপরিবর্তনের জন্য ঘটে থাকে। শ্বেতসার অদ্রবণীয় হওয়ায় এর উপস্থিতিতে রক্ষীকোষদ্বয়ের আভিস্রবণিক চাপ কমে যায়, ফলে কোষস্থ পানির বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে এবং এটি শিথিল হয়ে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে যখন অদ্রবণীয় শ্বেতসার হতে অধিকমাত্রায় দ্রবণীয় চিনি তৈরি হয় তখন আভিস্রবণিক চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী কোষ হতে অন্তঃঅভিস্রবণ ঘটে এবং রক্ষীকোষ দুটির রসস্ফীতি ঘটে, ফলে বাইরের দিকে বেঁকে যায় এবং পত্ররন্ধ্র খুলে যায়।
(রর) বিজ্ঞানী স্যায়েরী (ঝধুৎব, ১৯২৬) এর মতে, শ্বেতসার ও চিনির আন্তঃপরিবর্তন কোষ রসের ঢ়ঐ এর জন্য ঘটে থাকে। রাত্রিতে সূর্যালোকে না থাকায় সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু শ্বসন চলতে থাকে। শ্বসনের ফলে সৃষ্ট ঈঙ২ রক্ষীকোষের কোষরসে দ্রীবভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি করে, তাই ঢ়ঐ কমে যায় (ঢ়ঐ ৫)। কোষরসের ঢ়ঐ ৫ হলে ফসফোরাইলেজ এনজাইম কোষস্থ দ্রবণীয় গ্লুকোজÑ১Ñফসফেটকে, অজৈব ফসফেট এবং অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিণত করে। রক্ষীকোষে অদ্রবণীয় শ্বেতসার জমা হলে কোষরসের চিনির ঘনত্ব কমে যায় এবং পানির বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে, তাই রক্ষীকোষদ্বয় স্ফীতি হারিয়ে শিথিল হয়; ফলে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়।
দিনের বেলায় সূর্যালোকের কারণে আবার সালোকসংশ্লেষণ শুরু হয়, ফলে কোষরসে দ্রবীভূত ঈঙ২ ব্যবহৃত হয়ে যায় এবং ঢ়ঐ বেড়ে যায় (চঐ৭)। কোষরসস্থ চঐ বেড়ে গেলে ফসফোরাইলেজ এনজাইম অজৈব ফসফেট এবং অদ্রবণীয় শ্বেতসারকে পুনরায় দ্রবণীয় গ্লুকোজÑ১Ñ ফসফেটÑএ পরিণত করে। কোষে গ্লুকোজÑ১Ñফসফেট জমা হলে কোষরসে চিনির ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং আন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী কোষ হতে পানি রক্ষীকোষে প্রবেশ করে। তাই রক্ষীকোষ স্ফীত হয়, ফলে পত্ররন্ধ্র খুলে যায়।
(ররর) স্টার্চ-গ্লুকোজ পরস্পর রূপান্তর মতবাদ: বিজ্ঞানী স্টেওয়ার্ড (ঝঃবধিৎফ, ১৯৬৪) এর মতে, শ্বেতসার ও গ্লুকোজ ১ ফসফেট উপাদান অদ্রবণীয় হওয়ায় আভিস্রবণিক চাপের কোন পরিবর্তন ঘটে না। সৃষ্ট উপাদানটি ফসফোগ্লুকোমিউটেজ এনজাইমের সাহায্যে প্রথমে গ্লুকোজ ৬Ñ ফসফেট এবং পরে ফসফাইটেজ এনজাইমের সাহায্যে গ্লুকোজে পরিণত হলে রক্ষীকোষে আভিস্রাবণিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং সেখানে চঐ৫ থেকে বেড়ে চঐ৬Ñএ পৌঁছে। তখন পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষ বেঁকে গিয়ে ছিদ্র খোলে যায়। এ ঘটনা বিপরীতমুখী এবং তা ঘটলে ছিদ্র অবশেষে বন্ধ হয়ে যায়।
(রা) আধুনিক মতবাদ বা আয়ন প্রবাহ মতবাদ : এ মতবাদ অনুযায়ী পত্ররন্ধ্র বন্ধ ও খোলা রাখার ব্যাপারে পটাশিয়াম আয়নকে (ক+) দায়ী করা হয়। দিনের বেলায় রক্ষীকোষ প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আয়ন (ক+) ও ক্লোরাইড আয়ন (ঈষ) শোষণ করে। ফলে রক্ষীকোষে আভিস্রবণিত চাপ বেড়ে যায় এবং তখন পার্শ্ববর্তী মেসোফিল টিস্যু থেকে রক্ষীকোষে পানির ব্যাপন ঘটে। এ সময় রক্ষীকোষে টারগার প্রেসার (ঞচ) বেড়ে যাবার ফলে তা স্ফীত হয়ে ধনুকের মত বেঁকে যায় ও ছিদ্র বা রন্ধ্র উন্মুক্ত হয়। রাতের বেলায়
খবারঃঃ (১৯৭৪) -এর মতবাদ : লেভিট-১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে পত্ররন্ধ্র উন্মোচন প্রোটন চলাচল পদ্ধতির প্রর্বতন করেন। তাঁর মতে পত্ররন্ধ্র উন্মোচনে পটাশিয়াম আয়নের (ক+) সক্রিয় ভূমিকা বর্তমান। রক্ষীকোষে পটাশিয়াম আয়নের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ফলে পত্ররন্ধ্রের উন্মোচন ও বন্ধ সম্পন্ন হয়। কোষে ম্যালিক অ্যাসিড সরঞ্জামের পটাশিয়াম আয়নের তড়িৎ ভারসাম্য বজায় থাকে।
জৈব এসিডের ঐ+ আয়নের সাথে পটাশিয়াম আয়নের (ক+) বিনিময় ঘটে। সুতরাং আলোকের উপস্থিতিতে রক্ষীকোষে অধিক ম্যালিক অ্যাসিডের সঞ্চয়ের ফলে পটাশিয়াম আয়ন (ক+) শোষণ ত্বরান্বিত হয়। লেভিটের মতে, আলোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্ট হতে ম্যালিক অ্যাসিড রক্ষীকোষের সাইটোপ্লাজমে নিঃসৃত হয়। সুতরাং রক্ষীকোষ ক+ ক্যাটায়ন ও ম্যালিক অ্যাসিড অ্যানায়নের আধিক্যের ফলে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় রক্ষীকোষের পার্শ্ববর্তীকোষ হতে জল প্রবেশ করে। ফলে রক্ষীকোষ স্ফীত হয় এবং পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয়।