দশম অধ্যায়ঃ মানব দেহের প্রতিরক্ষা

এই পাঠে যা রয়েছে-মানব দেহের প্রতিরক্ষা
  1. অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি
  2. অনাক্রম্যতন্ত্র বা ইমিউন সিস্টেম
  3. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োজিত অঙ্গ ও কলা সমূহ-
  4. দেহের রস নির্ভর সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
  5. সহজাত ও অর্জিত প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোষগুলাে-

অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, কলা ও কোষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একত্রে দেহের প্রতিরক্ষা (defence) ব্যবস্থাপনায় কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে মানুষকে প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে বলা হয় ইমিউনিটি (immunity)।

অনাক্রম্যতন্ত্র বা ইমিউন সিস্টেম

দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, কলা ও কোষ সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্র দেহকে রােগাক্রমণের হাত থেকে এবং রােগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে তাকে ইমিউন তন্ত্র(immune system) বলা হয়। 

রােগ প্রতিরােধে ইমিউনিটির প্রধান উদ্দেশ্য তিন প্রকারের। যথা-

১। অণুজীবদের (micro-organisms) বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলা,

২। দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলােকে শনাক্ত করা ও প্রতিস্থাপিত করা এবং

৩। পরিত্যক্ত বা নষ্ট কোষগুলােকে শনাক্ত করা এবং তাদের ধ্বংস করা।

মানবদেহে প্রধাণত লিম্ফয়েড অঙ্গ ও শ্বেত রক্ত কণিকাগুলাে দেহের প্রতিরক্ষার কাজে অংশ গ্রহণ করে থাকে। ইমিউন তন্ত্রের লিম্ফয়েড অঙ্গগুলাে প্রাথমিক বা মুখ্য ও গৌন অঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োজিত অঙ্গ ও কলা সমূহ-

১। মূখ্য লিম্ফয়েড অঙ্গ

ক. লসিকা গ্রন্থি (Lymph nodes)

লসিকা বহনকারী লসিকানালির স্বল্প ব্যবধানে বহু গােলাকার বা ডিম্বাকার স্ফীত অংশ থাকে, এদের লসিকা গ্রন্থি বা লসিকা পর্ব বলে। দেহের প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত, তবে ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকিতে লসিকা গ্রন্থির পরিমাণ বেশি।

খ. লসিকা (Lymph)

লসিকা বর্ণহীন ও রক্তের ন্যায় এক ধরনের যােজক কলাবিশেষ। লসিকানালির মধ্য দিয়ে ঈষৎ ক্ষারধর্মী যে তরল যােজক কলা বা লসিকা প্রবাহিত হয় তাই লসিকা।

গ. লসিকানালি (Lymphatic vessels)

দেহের সর্বত্র বিস্তৃত নালিকা যেগুলাে লসিকা পরিবহন করে।

ঘ. থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland)

শ্বাসনালির পিছনে অবস্থিত গ্রন্থি।

ঙ. অস্থিমজ্জা (Bone marrow)

অস্থি গহ্বরে অবস্থিত লােহিত বর্ণের নরম ও চর্বিযুক্ত কলা।

২। গৌন লিম্ফয়েড অঙ্গ

ক. প্লিহা (Spleen)

উদর গহ্বরে পাকস্থলীর পাশে অবস্থিত লালচে বর্ণের মুষ্ঠি আকারের গঠন।

খ টনসিল (Tonsils)

গলার পিছনের দিকে অবস্থিত দুটি ডিম্বাকার গঠন।

গ. পেয়ার প্যাচ (Peyer’s patches)

ক্ষুদ্রান্ত্রে বিদ্যমান বিশেষ ধরনের লসিকা কলা।দেহের রােগ মুক্তিতে ইমিউন তন্ত্র রস নির্ভর ও কোষ নির্ভর সহজাত প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে।

দেহের রস নির্ভর সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

১। কমপ্লিমেন্ট

১১টির বেশী সিরাম প্রােটিনের সমন্বয়ে জীবাণু সংক্রমন রােধে কাজ করে।

২। লাইসােজাইম

ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ধবংস করে।

৩। ইন্টারফেরন

এক ধরনের প্রােটিন যা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করে। 

সহজাত ও অর্জিত প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোষগুলাে-

১। দেহের বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা কোষগুলাে সহজাত প্রতিরক্ষায় জড়িত।

সেগুলাে হলাে-

ক. গ্রানুলার লিউকোসাইট (Granular leukocytes)

রক্তে অবস্থিত নিউট্রোফিল, ইওসিনােফিল ও বেসােফিল।

খ. মনােনিউক্লিয়ার ফ্যাগােসাইট (Mononuclear phagocytes)

দু’রকমের দেখা যায়। যথা- মনােসাইট এবং ম্যাক্রোফেজ। মনােসাইট রক্তে অবস্থিত এক প্রকার শ্বেতকণিকা। এরা ফ্যাগাসাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহে প্রবিষ্ট রােগজীবাণুকে ধ্বংস করে।

ম্যাক্রোফেজ (macrophage) কোষ বিভিন্ন রকমের হয়। যথা- যকৃতের কুফার কোষ, অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ (alveolar macrophage), অস্টিওক্লাস্ট (osteoclast), যকৃতের মেসেঞ্জিয়াল কোষ (meessengial cell), মস্তিষ্কের মাইক্রোগ্লিয়াল কোষ (microglial cell) ইত্যাদি।

 গ. নাল কোষ (Null cell)

বিশেষ ধরনের লিম্ফোসাইট বা কিলার সেল বা ন্যাচারাল কিলার সেল (N.K. cell) নামে পরিচিত।

২। দেহের যেসব কোষ অর্জিত প্রতিরক্ষায় জড়িত সেগুলাে হলাে-

ক. B-লিম্ফোসাইট (B-lymphocyte)

কোষ অ্যান্টিবডির মাধ্যমে রস নির্ভর প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে।

খ. T-লিম্ফোসাইট (T-lymphocyte)

অ্যান্টিবডির মাধ্যমে কোষ নির্ভর প্রতিরক্ষা দিয়ে থাকে।মানবদেহের প্রতিরক্ষা স্তরঃআমাদের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য জীবাণুর বসবাস। এ জীবাণুদের মধ্যে একটি অংশ আমাদের দেহে রােগ সৃষ্টি করে থাকে। অসংখ্য জীবাণুদের মাঝে বসবাস করেও আমরা কিন্তু সুস্থ থাকি। কারণ আমাদের দেহে রয়েছে তিন স্তরের রােগ প্রতিরােগ ব্যবস্থা।

রােগজীবাণু কিংবা পরজীবী আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য মানবদেহে সাধারণভাবে তিন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়।

Leave a Comment